স্টাফ রিপোর্টার:
দুই বছর বয়সী শিশু কালা। গাড়ির নিচে পিষ্ট হয়ে মারা যায় সে। মৃত্যুর পর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাড়ি নেওয়ার পালা। কিন্তু বাবার কাছে গাড়ি ভাড়া নেওয়ার মতো অর্থ নেই। আবার কেউ সাহায্য করতেও এগিয়ে এলো না।
আর তাই বাধ্য হয়েই কালার মরদেহ হাতে তুলে হাঁটা শুরু করল তারই ১০ বছর বয়সী বড়ভাই। গত শনিবার (২৭ আগস্ট) চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাগপতের জেলা হাসপাতালে। সোমবার (২৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাড়ির নিচে পিষ্ট হয়ে মৃত্যুর পর গত শনিবার উত্তরপ্রদেশের বাগপতের জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয় ২ বছর বয়সী শিশু কালার। ময়নাতদন্তের পরে মরদেহ বাড়ি নেওয়ার জন্য বহু অনুরোধ করেও কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেনি মৃতের পরিবার।
পরে বাধ্য হয়ে কালার মরদেহ হাতে তুলে হাঁটতে শুরু করে তার ১০ বছর বয়সী বড়ভাই। পেছনে হাঁটছিলেন তার বাবাও। একপর্যায়ে স্থানীয়রা ভিডিও করা শুরু করলে এবং কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হলে তাদেরকে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। মরদেহ কোলে নিয়ে হাঁটার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এনডিটিভি বলছে, নিহত শিশু কালার বাবার নাম প্রবীণ কুমার। তিনি বাগপতের একজন দিনমজুর। বাগপতের জেলা হাসপাতাল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে শামলি জেলার লিলনখেডিতে নিজেদের পারিবারিক গ্রামে যাওয়ার জন্যই তারা একটি গাড়ি খুঁজছিলেন। তবে সেটি ভাড়া করার জন্য এক হাজার রুপির প্রয়োজন ছিল, যা প্রবীণ কুমারের কাছে ছিল না।
সংবাদমাধ্যম বলছে, যে কিশোরটি নিজের কোলে সাদা কাপড়ে মোড়া শিশুটিকে নিয়ে হাঁটছিল সেই শিশুটি তার ভাই। বয়স মাত্র দু’বছর। অভিযোগ, শিশুটি কাঁন্না করায় সৎমা তাকে রাস্তায় চলন্ত গাড়ির নিচে ছুড়ে ফেলেন। এতে চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শিশুটির।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে বাগপত হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ছেলের মৃত্যুতে শোকে পাথর প্রবীণ কুমার তার বছর দশেকের ছেলে সাগরকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। সন্তানের ময়নাতদন্ত হওয়ার পর মরদেহ তুলে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এসময় সন্তানের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে বলেছিলেন পেশায় দিনমজুর প্রবীণ। অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে তা ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। গাড়ি ভাড়া করে সন্তানের দেহ ৫০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবেন, সেই টাকাও ছিল না প্রবীণের কাছে। ফলে বাধ্য হয়েই সন্তানের মরদেহ নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করেন তারা।
কিছু দূর যাওয়ার পর সন্তানের দেহ ছেলে সাগরের কোলে তুলে দেন প্রবীণ। তার কথায়, ‘কিছুটা হাঁটার পর আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই ছোট ছেলের মরদেহ আমার বড় ছেলে সাগরের কোলে তুলে দিয়েছিলাম।’
এক কিশোরকে শিশুর মরদেহ কোলে নিয়ে হাঁটতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপরই গাড়ির ব্যবস্থা হয়।
বাগপত হাসপাতালের সিএমও দীনেশ কুমার বলেন, ‘যারা শববাহী গাড়ি চান, তাদেরই দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কয়েক মিনিট দেরি হয়েছিল। ততক্ষণে ওই ব্যক্তি তার সন্তানের মরদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করেন। বিষয়টি আমার নজরে আসতেই তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ এছাড়া লাশববাহী ভ্যান আসতে কেন দেরি হলো সেটিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার