বরিশাল প্রতিনিধি:
স্থানীয় এমপি পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী হয়ে ছাত্রলীগ না করায় বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ঢুকে এক কাউন্সিলরের নেতৃত্বে চারজনকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা সবাই পৌর মেয়র কামাল খানের অনুসারী।আর হামলাকারীরা বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আহতরা হলেন- ছাত্রলীগকর্মী রিমান, আব্দুল্লাহ, মেহেদী হাসান জিহাদ ও মেহেদী হাসান।
আহত ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, ‘কাউন্সিলর সোহেলের নেতৃত্বে কামাল, সোবহান, মিরাজ, আল আমিন, আকাশসহ ২০-২৫ জন দা ও লোহার পাইপ নিয়ে হাসপাতালে ঢুকে অন্য রোগী এবং তাদের স্বজনদের বের করে দিয়ে চিকিৎসকের সামনেই আমাদের কুপিয়ে-পিটিয়ে আহত করে। এর আগে আমাদের বন্ধু রিমানকে ধরে নিয়ে যায় ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল মোল্লা ও তার সহযোগীরা। তাকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেওয়ার পরে রিমানকে নিয়ে হাসপাতালে আমরা আসলে সেখানে আমাদের মারধর করে।’
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র কামাল খান বলেন, ‘সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি না করায় রিমানের ওপর আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল এমপির লোকজন। শনিবার (২৭ আগস্ট) রাতে রিমানকে এক দফায় মারধর করে। এরপর আজকে (রোববার) দুপুর ১টার দিকে রিমানকে তুলে নেয় কাউন্সিলর সোহেল মোল্লা ও তার লোকজন। সেখানে মারধর করে।’
‘খবর পেয়ে রিমানের বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এ খবর পেয়ে সোহেল মোল্লা সহযোগীদের নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকে পুনরায় রিমান ও তার বন্ধুদের কুপিয়ে জখম করে। পুলিশ গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আমরা আহতদের উদ্ধার করে বরিশাল হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান পৌর মেয়র।
কাউন্সিলর সোহেল মোল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘যারা অভিযোগ করেছেন তারা সবাই ছাত্রদলের নেতাকর্মী। পৌরমেয়র কামাল খানের ছেলের সঙ্গে চলাফেলা করে।’
তিনি পালটা অভিযোগ করে বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্যের কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে রোববার দুপুরে আমার বাড়ির পাশে দোয়া ও ভোজের আয়োজন করি। দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ছাত্রদলের একটি ছেলে দোয়া অনুষ্ঠান ও সংসদ সদস্যের ছবি সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলছিল।এটা দেখে আমাদের দলীয় কয়েকজন কর্মী তাকে ধরে ফেলে।এরপর আমি গিয়ে ছেলেটিকে রক্ষা করে আমার বাসায় নিয়ে যাই। আধা ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছেলেটিকে তার বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করি।’
‘এরপর আমি আবার বাইরে গেলে খবর পাই আমার বাড়ি ভাংচুর হচ্ছে। আমি বাড়িতে ফিরে এসে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে তারা পাশেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশ্রয় নিলে আমরাও সেখানে যাই এবং সেখানে সামান্য ধস্তাধস্তি হয়। এর বেশি কিছু নয়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাইয়্যেদ মো. আমরুল্লাহ বলেন, ‘হাসপাতালে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে ভাংচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা তাৎক্ষণিক পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেছি।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ‘মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জেনেছি। তবে সরকারি স্থাপনা ভাংচুর বা হামলার কোনো তথ্য পাইনি। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।’
মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ নেতা রিমানকে পেয়ে কাউন্সিলর সোহেল মোল্লার লোকজন বাড়ির সামনে আটকে মারধর করে। পরবর্তীতে রিমানকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে রিমানের ৪-৫ জন বন্ধু চিকিৎসা সহায়তার জন্য হাসপাতালে যান। এ খবর পাওয়ার পরে সোহেল মোল্লার নেতৃত্বে তার সহযোগীরা চাপাতি-রামদাসহ ধারাল অস্ত্র নিয়ে ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে চারজনকে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত করে। পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছার আগেই হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।হাসপাতালে আহত রিমানকেও কোপানো হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে আহতদের বরিশাল চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
ওসি বলেন, কাউন্সিলর সোহেল মোল্লা বরিশাল ৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী। আহতদের থানায় অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। হামলাকারীদের এখন পর্যন্ত আটক করা না গেলেও অভিযান শুরু করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভাংচুরের বিষয়ে তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমি নিজে যাই। তবে হাসপাতাল ভাংচুরের কোনো অভিযোগ কেউ করেনি।