সিলেটSunday , 4 September 2022
  1. আইন-আদালত
  2. আন্তর্জাতিক
  3. উপ সম্পাদকীয়
  4. খেলা
  5. ছবি কথা বলে
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম
  8. প্রবাস
  9. বিচিত্র সংবাদ
  10. বিনোদন
  11. বিয়ানী বাজার সংবাদ
  12. বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন
  13. ব্রেকিং নিউজ
  14. মতামত
  15. রাজনীতি

প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে হারিছ চৌধুরীকে স্মরণ, মারা গেছেন ঢাকায়

Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার:
এক বছর আগে এই দিনে মারা যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী। তাকে দাফন করা হয় সাভারের একটি কবরস্থানে। তার মৃত্যুর বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের বাইরে জানতেন না কেউ।

গত ৬ই মার্চ হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর দেশে। মৃত্যুর পর অনেকটা অগোচরেই হারিছ চৌধুরীর লাশ দাফন হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতাও ছিল না। এ কারণে প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মরণে সিলেটের সীমান্তবর্তী কানাইঘাটের নিজ বাড়িতে একত্রিত হয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত শনিবার আয়োজন করা হয় দোয়া মাহফিলের। এতে পরিবারের সদস্য ছাড়াও দলীয় নেতাকর্মী এবং এলাকার সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

বেলা দুইটার পর দোয়া মাহফিল শুরু হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন- সড়কের বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও জমিয়ত নেতা মাওলানা মুফতি এবাদুর রহমান। দোয়া পরিচালনার পূর্বে তিনি জানান- ‘হারিছ চৌধুরী এলাকার মানুষকে ভালোবাসতেন। সব সময় সবার কাছে দোয়া চাইতেন। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।

এ সময় তিনি হারিছ চৌধুরীর প্রয়াত আরেক ভাই সেলিম চৌধুরীকে স্মরণ করেন।’ দোয়া মাহফিলে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ ক্ষুদ্র ঋণ-বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর ছোট ভাই আছকির আলী, এম. ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপি নেতা ময়নুল হক, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, জেলা বিএনপি নেতা মাহবুবুল হক চৌধুরী, কানাইঘাট উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হক, জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সেলিম, সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান আহমদ সোলেমান, জামায়াত নেতা অধ্যাপক আব্দুর রহিম প্রমুখ।

হারিছ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তার স্মৃতি বিজড়িত সড়কের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে ‘হারিছ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে’ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে হারিছ চৌধুরীর বড় ভাই প্রবাসী চিকিৎসক আব্দুল মুকিত চৌধুরী মামুন, ছোট ভাই কামাল চৌধুরী, স্ত্রী হোসনে আরা চৌধুরী, মেয়ে সামিরা ইসলাম চৌধুরী, বোন এখলাছুন্নেছা চৌধুরী, রুনা চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। হারিছ চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমার পিতা হারিছ চৌধুরী গত বছরের এইদিনে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। অসহযোগিতার কারণে তাকে নিজ বাড়িতে এনে আমার দাদীর কবরের পাশে দাফন করতে পারিনি।

এ কারণে তার মৃত্যুর দিন স্মরণে নিজ এলাকায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজন উপলক্ষে পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলিত হয়েছেন। অনেকে প্রবাস থেকে দেশে এসেছেন।

তিনি বলেন, বাবার মৃত্যুর পর আমরা কিছুই করতে পারিনি। এ কারণে এবার সবাই মিলে এ আয়োজন করেছি। আমার পিতা এলাকার মানুষকে ভালোবাসতেন। সব সময় মানুষের কথা চিন্তা করতেন। এজন্য আমরা বাড়িতেই এ আয়োজন করেছি।

হারিছ চৌধুরী লন্ডনে নয়, মারা গেছেন ঢাকায়, জানালেন ব্যারিস্টার কন্যা সামিরা,
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী লন্ডনে নয়, ঢাকায় মারা গেছেন। এটা নিশ্চিত করলেন হারিছ চৌধুরীর বিলেত প্রবাসী কন্যা সরকারি চাকরিজীবী ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী। যদিও বাবার খবর জেনে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। কবে মারা গেলেন হারিছ চৌধুরী? দিন, তারিখও জানা গেল তার কাছ থেকে।

করোনাসহ একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৩রা সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের মেধাবী ছাত্র ১/১১-এর পর থেকে টানা ১৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে সামিরা জানালেন, আব্বু আসামে কিংবা লন্ডনেও যাননি। বাংলাদেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। তবে কোথায় ছিলেন, কীভাবে ছিলেন তা তিনি খোলাসা করলেন না। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, চাচা আশিক চৌধুরী বলেছেন- লন্ডনে মারা গেছেন। সামিরার সোজাসাপ্টা জবাব, কেন তিনি বলেছেন সেটা আমি বলতে পারবো না। তিনিই ভালো বলতে পারবেন। দাফন হলো কোথায়? সামিরা তখন কাঁদছেন। কয়েক সেকেন্ড পর কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললেন, ঢাকায়। কোন গোরস্থানে? দূরে, অনেক দূরে। ঢাকার বাইরে। যেখানে যেতে এক-দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালাতে হয়। আত্মগোপনে থাকার সময় কি তার সঙ্গে কথা হতো? না, আমি কখনো কথা বলতে পারিনি। আমার ভাই ইঞ্জিনিয়ার নায়েম শাফি চৌধুরীর সঙ্গে কথা হতো। সে এখন সুইজারল্যান্ডে সিনিয়র এনার্জি অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মরত। শুনেছি তার সঙ্গে দু’-একবার কথা হয়েছে। চাচা আশিক চৌধুরী জানতেন বলে শুনেছি। গ্রামের বাড়িতে দাফন হলো না কেন? চাচা আশিক চৌধুরী সাহস করতে পারেননি। তিনি তখন আমাদের বলেছেন- কোনো অবস্থাতেই গ্রামে নিয়ে এসো না। বারবার তিনি নিরাপত্তার কথা বলেছেন। তখন ভয় পেয়ে যাই। বাস্তব অবস্থা এমনই। কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। উপায় কি! বন্ধু-বান্ধবদের পরামর্শে বাবার লাশ গ্রামে নেয়া থেকে বিরত থাকলাম। সামিরা তখন কান্নায় ভেঙে পড়লেন। স্বাভাবিক হতে সময় লাগলো। এসব প্রশ্ন না করলেই কি নয়! কি আর বলবো। একা একা বাবাকে গোসল করাতে নিয়ে গেলাম। কাউকে জানাইনি।

বাবার সঙ্গে কবে শেষ কথা হয়? ২৪শে আগস্ট লন্ডন থেকে ফোনে আব্বুর সঙ্গে কথা হয়। কথাবার্তা ছিল অগোছালো, অস্পষ্ট। কথা বলতে পারছিলেন না। হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছিলেন। কি বললেন? কাউকে বলো না মা, চলে এসো। তোমাকে দেখার বড় ইচ্ছে। তোমার বাবুটাকেও নিয়ে এসো। ২৬শে আগস্ট ঢাকায় পৌঁছার পর হাসপাতালে প্রথম দেখা। তখন তার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। শুনেছি এর আগে তাকে একটি ছোটখাটো হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। কারা নিয়ে গিয়েছিল সেটা সামিরা জানেন না। যাইহোক, এক পর্যায়ে নেয়া হলো তাকে লাইফ সাপোর্টে।

মাত্র ৬ দিন বেঁচে ছিলেন। প্রতিদিন হাসপাতালে যেতাম ঝুঁকি নিয়ে। করোনার ভয়ে চিকিৎসকরা নিষেধ করতেন। ২রা সেপ্টেম্বর চিকিৎসক বললেন, আর আশা নেই। লাইফ সাপোর্টে রাখতে পারেন, কিন্তু কোনো লাভ হবে না। জোর করে আরও একদিন রাখলাম। তখন আব্বুর কপালে লিখে দিলাম, ‘আল্লাহু’, যেটা দাদুর কপালেও লিখে দিয়েছিলাম। এরপর কি হলো? নিথর একটি মৃতদেহ পেলাম। রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরী তখন চলে গেছেন অন্য জগতে। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। এম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে ছুটে গেলাম দূরের এক ঠিকানায়। যেটা আগেই উল্লেখ করেছি।

সামিরা অনেক কিছুই বললেন। তবে আমার মনে হলো, সবটা বললেন না। কিছুটা সেন্সর করেই বললেন। এক পর্যায়ে বললেন, বাবার সম্পত্তি গ্রামে রয়েছে। ঢাকায় কোনো সম্পত্তি নেই। গ্রামে স্কুল, মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। যা দেখভাল করেন আশিক চৌধুরী। সিলেটের কানাইঘাটের বুনিয়াদি পরিবারের সন্তান হারিছ চৌধুরী এসেছিলেন সরবে। চলে গেলেন নীরবে। এটাই বোধ করি নিয়তি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার