স্টাফ রিপোর্টার:
সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন চাইবেন কিনা- এ নিয়ে তার এই সিদ্ধান্তহীনতা। সিলেট-২ আসনে ২০০৮ সালে বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর থেকে যুক্তরাজ্যর রাজনীতি ছেড়ে সিলেটে অবস্থান করেন। সিলেট-২ আসনকে ঘিরেই শফিকুর রহমান চৌধুরীর ভোটের রাজনীতি। এলাকায় ২৪ ঘণ্টার রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। হঠাৎ করেই জেলা পরিষদমুখী হয়েছেন তিনি।
ঘনিষ্ঠজনদের দাবি- আর কতো অপেক্ষা। সিলেট-২ আসনে নৌকা নির্বাসিত। সেই সঙ্গে নির্বাসিত শফিকুর রহমান চৌধুরীও।
আগামীতে এ আসনে নৌকার প্রার্থী আসবে কিনা- সেটি নিশ্চিত নয়। এ কারণে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন তিনি। অন্যদিকে- জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানও এ পদে প্রার্থী। অনেক আগে থেকেই মাঠে। গুছিয়ে নিয়েছেন মাঠও। আগেই পেয়েছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরীর সমর্থন। মাঠ পর্যায়ে ভোটারের মতামতও গ্রহণ করেছেন। আশ্বাস পেয়েছেন তাদের কাছ থেকেও। জানিয়েছেন- আজ-কালের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমাও দেবেন। দলের কাছে চাইবেন সমর্থন। প্রার্থী দিলে অবশ্যই অতীতের মতো জেলা পরিষদে জয়ের ধারা বজায় রাখবে আওয়ামী লীগ।
বিগত ইউপি, পৌর ও উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে বাজিমাত করেছেন। ফলে ভোটের হিসাবে সিলেট জেলা পরিষদে এগিয়ে থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
এ ছাড়া সিলেটে দলের ভেতরে বিভাজন নেই। নৌকার পক্ষে সবাই একাট্টা হয়ে মাঠে নামবেন। এ কারণে দলীয় সমর্থন পেলে নাসির উদ্দিন খান জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা বেশি দেখছেন। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, আমি সিলেট-২ আসনের ভোটের রাজনীতি থেকে কখনো সরে যাইনি। বরং বন্যা, দুর্দিন, দুর্যোগে সবসময় এলাকার মানুষের পাশে আছি। আমার প্রথম পছন্দের তালিকায় সিলেট-২ আসনই। জেলা পরিষদ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বোঝাপড়া করছি। বুঝেশুনে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগে শফিক-নাসির জুটি অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় শক্তিশালী। তাদের নেতৃত্বে শুধু জেলা নয়, সিলেট আওয়ামী লীগও ঐক্যবদ্ধ। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের দু’জনের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হলে সেটি হবে দুঃখজনক- তেমনটি জানিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। ফলে শফিকুর রহমান চৌধুরী সিদ্ধান্তহীনতা থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছলে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে- সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন পেতে মুখিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি এখন ব্যাকফুটে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হারানোর পর অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন। তবে- সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় রয়েছেন। সম্প্রতি তার কর্মকাণ্ডে গতি বাড়িয়েছেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটিই তিনি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করছেন। মেয়রের চেয়ারের দিকেও চোখ তার। মিসবাহ সিরাজের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন- সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সিনিয়র নেতা এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
সিলেটকে ঘিরেই তার রাজনীতি। জেলা পরিষদের কর্তৃত্ব আওয়ামী লীগের হাতেই। সিলেটের উন্নয়নে, মানুষের জন্য মিসবাহ সিরাজ জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন চান। দলীয় টিকিট পেতে তিনি লবিংও চালাচ্ছেন। তবে- টিকিট না পেলে তিনি প্রার্থী নাও হতে পারেন বলে জানিয়েছেন তারা। মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিজিত চৌধুরীও জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান। তফসিল ঘোষণার পর থেকে তিনি মাঠে সরব। দলীয় ফোরামে মনোনয়ন চাইতে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। সিলেটের প্রয়াত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ঘনিষ্ঠজন বলে ছিলেন বিজিত চৌধুরী। কামরানের মৃত্যুর পর অনেকটা একা হয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করলেও এখনো তার ভাগ্যে জুটেনি বড় কোনো পদ। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
বিজিত চৌধুরী জানিয়েছেন- আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আওয়ামী লীগের কাছে দলীয় মনোনয়ন চাইবো। তবে- দিনশেষে দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত মেনেই সবাইকে রাজনীতি করতে হয়। আমিও তাই করি। তিনি জানান- জেলা পরিষদ হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়নের অন্যতম সেতুবন্ধন। উন্নয়নের ধারণা নিয়েই তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলে জানান।