সম্পাদকীয় :
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ অবস্থায় ইসির কাছে থাকা ইভিএমগুলো কী অবস্থায় আছে তা আলোচনায় আসবে, এটাই স্বাভাবিক। জানা গেছে, যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের অভাবে মাঠপর্যায়ে থাকা ৯৩ হাজার ৪১০টি ইভিএমের ৩০ শতাংশ অকেজো হয়ে গেছে।
এছাড়া ঝুঁকিতে রয়েছে ৬৫ হাজার ইভিএম; যেগুলোর বেশিরভাগের হার্ডওয়্যার-সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। অনেক মেশিনের যন্ত্রাংশ হারিয়ে গেছে কিংবা চুরি হয়ে গেছে। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এ মেশিনগুলোর আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে। এত দামি মেশিনগুলোর ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিষয়টি দুঃখজনক।
২০১৮ সালে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে ইভিএমগুলো ক্রয় করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন ইসি ইভিএমগুলো ক্রয় করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেও এসব মেশিন সংরক্ষণের অভিজ্ঞ জনবল ও উপযুক্ত জায়গার ব্যবস্থা করেনি। ইভিএম সংরক্ষণে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতাই যথেষ্ট নয়; এর সঙ্গে দরকার সংরক্ষণের উপযুক্ত জায়গাও।
কাজেই বর্তমান ইসির উদ্যোগে নতুন করে আরও যেসব ইভিএম ক্রয় করা হবে, সেগুলোর পাশাপাশি বিদ্যমান ইভিএমগুলো সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে অভিজ্ঞ জনবলের ব্যবস্থা করা না হলে নতুন ক্রয় করা ইভিএমগুলোর দশা বিদ্যমান ইভিএমগুলোর মতোই হয়ে যেতে পারে। যেহেতু বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে মেশিনগুলো ক্রয় করা হবে, সেহেতু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী মানসম্মত মেশিন ক্রয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশে যেসব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম-বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিপুল অর্থ ব্যয় করে এসব মেশিন যারা এনেছেন, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। বিশ্ব প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে চলেছে। সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। নির্বাচনেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে চায় ইসি।
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো জরুরিও বটে। এজন্য এ বিষয়ে ভোটারদের আস্থা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপি করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন অনেক ভোটার। কাজেই দেশে ব্যবহার করা ইভিএম যে ত্রুটিপূর্ণ নয়, ভোটারদের মধ্যে সে বিশ্বাস সৃষ্টির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।