স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জয়নাল আবেদীন ও এনামুল হক সর্দার- এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ সময়ে এসে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে না যাওয়ার কথা জানিয়েছেন বর্তমান প্রশাসক জয়নাল আবেদীন। আর শিক্ষানুরাগী ড. এনামুল হক সর্দার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন বলে জানা গেছে।
আগামী ১৭ অক্টোবর সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল এ নির্বাচনে সিলেটে প্রার্থী দেয়নি। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খানকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল। গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় নাসির খানকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।
এর আগে সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করেছিলেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের ৫ নেতা। মনোনয়নপ্রাপ্ত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ছাড়াও মনোনয়ন ক্রয় করেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জজকোর্টের পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিজিত চৌধুরী ও বর্তমান প্রশাসক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন। তবে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ছাড়া অন্য ৪ নেতা দলীয় মনোনয়ন জমা দেন। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের, তিনি পান দলীয় মনোনয়ন।
নাসির খানকে চূড়ান্ত করার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন।
এ বিষয়ে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিনি বলেন- ‘আমি শেখ হাসিনার কর্মী। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাহিরে যাওয়ার অবকাশ নাই। আমি দলীয় সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো।’
অপরদিকে, গত নির্বাচনে প্রয়াত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডির লড়াই করে পরাজিত হওয়া শিক্ষানুরাগী ড. এনামুল হক সরদার বলেন- ‘আমার একান্ত কোনো ইচ্ছা ছিলো না নির্বাচন করার। তবে গত নির্বাচন করায় অনেক জনপ্রতিনিধি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। তাঁদের অনুরোধে আমি প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারবো।’
জানা যায়- ২০১৬ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনে অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদার সাবেক গণপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৫৫৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। ২৪ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকা এনামুল সর্দার সিলেট শহরে বিভিন্ন প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন।
আর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি জয়নাল আবেদীন ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়ে পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর মারা গেলে মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি। গত ১৭ এপ্রিল সিলেটসহ দেশের ৬১ জেলা পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় পরিষদগুলো বিলুপ্ত করে সরকার। এসব জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তবে সরকার নতুন প্রশাসক নিযুক্ত করলে তিনি জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠিতব্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করতে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করেন তিনিসহ ৫ নেতা। ৪ নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিলে মনোনয়ন বোর্ড জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী- আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর। আপিল ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর ও প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৬ সেপ্টেম্বর।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার