স্টাফ রিপোর্টার :
পুরো সিলেট জুড়ে ব্রিটিশ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে চলছে রকমারি বাণিজ্য। সিলেট নগরীর গন্ডি ছাড়িয়ে উপজেলায়-উপজেলায় স্টুডেন্ট ভিসার লন্ডন জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন সত্যি করার লক্ষ্যে সিলেট নগরীর পাশপাশি উপজেলা শহর গুলোতেও গড়ে উঠেছে একের পর এক স্টুডেন্ট কনসালটেন্ট ফার্ম। এসব ফার্ম থেকে কিভাবে স্বপ্নের দেশে যাওয়া যায় সে ব্যাপারে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরামর্শ। বিনিময়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ব্রিটেনে কলেজের রেজিষ্ট্রেশন ফি, ভিসা ফি, টিউশন ফি ইত্যাদি বাবদ সর্বমোট ৪-৫ লাখ টাকা খরচ হলেও এসব প্রতিষ্ঠান প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাড়তি হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষাধিক টাকারও বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষ বুঝে নেয়া হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। সাধারণ প্যাকেজ আর বিশেষ প্যাকেজের ঘোষণা দিয়ে ব্রিটিশ ভিসা প্রত্যাশী তরুণদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সরকারের নতুন নিয়মের অন্যতম প্রধান শর্ত ১২ লাখ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স। এই জন্য তারা দ্বারস্থ হচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের।
এক অভিভাবক জানান, ফার্মগুলো স্থানীয় কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আতাত করে স্টুডেন্টের নামে ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাচ্ছে। এর কারণে ফার্মগুলো যে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে তার একটি অংশ পায় ব্যাংক কর্মকর্তারা। এমনকি সরাসরি কিছু ব্যাংক কর্মকর্তাও এই মৌসুমী বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন।
ব্রিটেন গমনেচ্ছুক এক ছাত্রের পিতা জানান, এক ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে ছেলে ব্যাংক ব্যালেন্স দেখিয়েছেন। বিনিময়ে তাকে দুই মাসে অতিরিক্ত দুই লাখ টাকা দিতে হবে। শুরু হয়েছে সার্টিফিকেট বাণিজ্যও। অল্প শিক্ষিত ছেলেরা অন্যের সার্টিফিকেট কিনে স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেন যাচ্ছে। এস এস সি ও এইচ এস সি সার্টিফিকেট বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দুই লাখ টাকায়। বি এ বা এম.এ সার্টিফিকেটের মূল্য দুই থেকে তিন লাখ টাকা। মেডিক্যাল চেকআপের তারিখ এগিয়ে আনতেও বড় অংকের টাকা উৎকোচ নেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত ফির চেয়ে কয়েকগুন বেশি টাকায় পাসপোর্টের আনুষঙ্গিক কাজ ও সম্পন্ন হচ্ছে স্বল্পসময়ে। সব মিলিয়ে ব্রিটিশ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে সিলেটে চলছে রকমারি বাণিজ্য।
জানা গেছে, ব্রিটিশ সরকার বহির্বিশ্ব থেকে শিক্ষার্থী আনার সহজ পদ্ধতি গ্রহন করে। কমপক্ষে এইচ এস সি সমমান উত্তীর্ণ যে কেউ লন্ডনে পড়ালেখা করার এ পদ্ধতি গ্রহণ করাতে পারছে। নতুন নিয়মে আই ই এল টি এস বাধ্যতামূলক নয়। শিক্ষার্থীদের নিজ নামে অথবা যৌথ নামে থাকতে হবে কমপক্ষে ১২ লাখ টাকার ব্যাংক একাউন্ট।
এ প্রসঙ্গে বিয়ানীবাজার ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অনেকে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা এনে ব্যাংকে জমা রাখেন। ব্রিটিশ সরকারের এ নীতির ভিত্তিতে সিলেটি ছেলেমেয়েদের লন্ডনে উচ্চ শিক্ষা নেয়ার হিড়িক পড়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার সিলেটি তথা বাংলাদেশী শিক্ষার্থী চলে গেছে সেখানে। আরও কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ফাইল দূতাবাসে চলমান কাজ প্রক্রিয়াধীন। এম.সি কলেজে অধ্যায়নরত গোবিন্দশ্রীর বাংলা বিভাগের এক ছাত্র জানায়, জিন্দাবাজারের একটি স্টুডেন্ট ফার্ম তাকে লন্ডনের একটি এক রেটিং কলেজে ভর্তি করার আশ্বাস দিয়ে নিজ নামে ওই কলেজে স্টুডেন্ট ফাইল দেওয়ার কথা বলে আড়াইশ পাউন্ড। (৩০ হাজার টাকা) নিয়েছে।
এছাড়াও তারা প্রথমদিকে ১০-১২ দিনের ভেতর সংশ্লিষ্ট কলেজ থেকে অফার লেটার, ভিসা লেটার এনে দেয়ার কথা বললেও মাসখানেক পার হয়ে যাওয়ার পরও এসব কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার