স্টাফ রিপোর্টার:
বিয়ানীবাজার পৌর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ২৭ কোটি টাকার মূল্যের পুরাতন হাসপাতাল ও সওজ ভ‚মিতে এবার নজর পড়েছিল পৌরসভার। এমন অভিযোগ উঠলে বিয়ানীবাজারবাসীর মধ্যে পুরাতন হাসপাতাল এবং সড়ক জনপতের ভূমি নিয়ে হইচই শুরু হয়। অবশেষে বিয়ানীবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সবজি বাজার ও হকার পূণর্বাসন প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন করার পর প্রকল্প স্থগিত করে দেন। কলেজ রোড মোড় সংলগ্ন পাকা দেয়ালের বেস্টনি দেয়া সওজ এর ভূমিতে অস্থায়ী ভাবে হকার পূণর্বাসন প্রকল্প সওজ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কাজ শুরুর কারণে কর্তৃপক্ষের বাঁধায় তিনি এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়।
জানা যায়, হাসপাতাল ও সওজ এর ভূমিতে অস্থায়ী ভাবে হকার পূণর্বাসন প্রকল্পের কাজ সম্প্রতি শুরু করেন নবনির্বাচিত পৌর মেয়র ফারুকুল হক। ইতিমধ্যে তিনি পড়ে থাকা ঐ ভূমির ময়লা আবর্জনা অপসারন করেন। উক্ত স্থান ব্যবহার উপযোগী করার জন্য গত ২/৩ দিন থেকে মাটি কাটা ও ভরাট কাজ শুরু করেন। এ অবস্থায় বিষয়টি সওজ কর্তৃপক্ষের নজরে আসে, সওজের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্থানীয় কর্মচারি জসিম উদ্দিন বুধবার রাতে ঐ ভূমির গেইট বন্ধ করে একটি থালা ঝুলিয়ে দেন এবং অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ লিখা একটি সাইন বোর্ডও ঝুলিয়ে দেন।
সূত্রে জানা যায়, অতীতে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্থানীয় শাখার ব্যানারে মানব সেবার নাম করে উক্ত ভ‚মি গ্রাস করার পায়তারায় লিপ্ত হয়ে ব্যর্থ হয়েছিল একটি মহল। উপজেলার প্রভাবশালি এই সংগঠন অতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশি¬ষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে আবেদন করেছিল। হাসপাতাল এবং সড়ক ও জনপদের ভ‚মির বৃহৎ একটি অংশ বিগত দিনে অবসর প্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা বন্দোবস্তের বরাত নিয়ে তিনি দোকানপাট ও ভূমির কিছু অংশ বিক্রয় পায়তারায় লিপ্ত হয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এতে করে অপর অংশটি ভ‚মি খেকো অন্যান্য চক্র নিজেদের দখলে নিতে নানা ফন্দি চালিয়ে যাচ্ছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জনৈক জমিদার বাবু বড়দা প্রসাদ গুপ্ত ১৮৯৪ সালে বর্তমান জমিতে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে একটি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণ করেন। চিকিৎসা কেন্দ্রটি শর্ত সাপেক্ষে ওই বছর জমিসহ সরকারকে দান করেন। জনস্বার্থে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত না হলে উক্ত ভ‚মিটি বাবুর উত্তরাধীকারী আবার ফিরে পাবেন শর্তে করে দেন। তৎকালীন সরকারের মহকুমা উন্নয়ন বোর্ড ও আসাম কমিউনিকেশন বিভাগকে ভুমিটি জনস্বার্থে ব্যবহার করার জন্য দান করে। ওই ভ‚মিতে পাকিস্তান আমলে থানা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে হাসপাতালটি অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়। বিগত সরকারের বিভিন্ন আমলে স্বাস্থ্য বিভাগের এই ভুমিতে একটি আধুনিক শিশু হাসপাতাল নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। আর্থিক সংকটের কারণে তা দীর্ঘদিন থেকে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়। এখনো উপজেলা স্যানিটেশন কার্যক্রম এবং ঠিকাদান কার্যক্রম এখান থেকে পরিচালিত হচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকাররা বাবুর বসত ভিটায় আগুন ধরিয়ে দিলে তার উত্তরসূরীরা দেশ ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান।
ফতেহপুর মৌজার জে.এল, নং-১০৭, দাগ নং ১০১১, খতিয়ান নং ৭ এর ১.৩৫ একর জমির মালিকানা দাবীতে ৪ যুগ ধরে দ্বন্দে লিপ্ত ছিল সওজ ও স্বাস্থ্য বিভাগ। কয়েক বৎসর আগে বন্দোবস্তের বরাত দিয়ে উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের অধিবাসী জাতীয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমদ এ ভ‚মির বৃহৎ একটি অংশ নিজের দখলে নিয়ে দোকানপাট নির্মান করে এবং দোকানের কিছু অংশ বিক্রয় পায়তারায় লিপ্ত থাকেন এমন অভিযোগ উঠে। পরর্বতীতে লিজ গ্রহিতা লিজের সর্ত ভঙ্গ করায় তার লিজ বাতিল করে থাকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়। তবে এ জন্য তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। এমনকি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্থানীয় শাখা স্বাস্থ্য সেবার নাম করে ভ‚মির বাকী অংশ দখল করার পায়তারায় লিপ্ত হয়েছিল।
তবে উক্ত ভূমির চতূর্পাশে দেয়াল নির্মান হলেও উত্তর-পূর্ব পাশে কিছু দোকানপাট গড়ে উঠে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে নিরবতা পালন করছেন।
স্থানীয় জনতার দাবি, ভ‚মিটি কোন সংগঠন কিংবা ব্যক্তিকে বন্দোবস্ত না দিয়ে, সরকারের উদ্যোগে এখানে একটি শিশু হাসপাতাল নির্মাণ করা প্রয়োজন। বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন সামজিক সংগঠন শিশু হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে।
এ বিষয়ে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান সিলেট কন্ঠকে জানান, বিয়ানীবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ বিনা অনুমতিতে উক্ত ভূমির উপরে কোন স্থাপনা নির্মিত হলে সরকারি আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিয়ানীবাজার উপজেলার দায়িত্বে থাকা সওজ এর এসও আতাউর রহমান বলেন, আমি বাধা দিয়ে এসেছি।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র জিএস ফারুকুল হক বলেন, কলেজ রোড মোড়সহ প্রধান সড়ক গুলোর পাশে ফুটপাতে সবজি ব্যবসায়ী ও হকাররা ব্যবসা করার কারণে সড়কে যানজট বাড়ছে, লোকজনের হাঁটা চলায়ও বিঘœ ঘটছে। এ বিবেচনায় আমি সার্বিক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অস্থায়ীভাবে উক্ত ভূমির কিছু অংশে তাদেরকে পূর্নবাসন করতে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তিনি বলেন, যেহেতু উক্ত জায়গাটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, এখান থেকে নোংরা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, উক্ত জায়গাটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে এখানে ফুটপাতের ঐ সকল ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী ভাবে স্থানান্তরিত হলে ক্ষতি কি ছিল? আমি জনমানুষের সার্বিক কল্যাণে ঐ কাজটি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু স্থানীয় কিছু অসাধু লোকের বাধার কারণে সওজ কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এই প্রকল্প এখানেই সমাপ্ত করে দিলাম। সওজের দেওয়া তালা ও সাইনবোর্ড ভাঙ্গার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
এদিকে, বিগত ক’দিন থেকে ঐ ভূমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও মাটি কাটার কাজ করার পর প্রকল্প থেকে ফিরে আসার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, সরকারি পরিত্যক্ত ভূমি জনকল্যাণে অস্থায়ী ভাবে ব্যবহার করলে ক্ষতি কি হতো। মেয়রের এই উদ্যোগ সফল হলে জনগণ উপকৃত হতেন। আবার বিপরীত কথাও বলছেন অনেকে, তারা বলছেন পূর্বানুমতি ছাড়া অন্যের ভূমিতে প্রবেশ করা ও কাজ করানো বেআইনি, মেয়রের এই কাজ করা সঠিক হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেলওয়ার হোসেন সুমন সিলেট কন্ঠকে জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসা আশিক নূর জানান, সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি আমাকে মুটোফোনে আমাকে অবহিত করেছেন। যেহেতু সওজ এর ভূূূূূূূূূূূূূূূূূূূমি, তারা আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানিয়া আক্তারের সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও, তাকে পাওয়া যায়নি।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার সাবেক প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন ও প্রথম নির্বাচিত মেয়র মো: আব্দুস শুকুরের সাথে সিলেট কন্ঠের পক্ষ থেকে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলে, তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
সওজ কর্মচারি জসিম উদ্দিন জানান, গেইটে আবার তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড লাগানো হবে।