স্টাফ রিপোর্টার:
প্রবাসী অধ্যুষিত বিভাগীয় নগরী সিলেট এবং প্রবাসী বহুল বিভিন্ন উপজেলা সদরে কোটি কোটি টাকার হুন্ডি ব্যবসা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কমপক্ষে ১০০০ ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে অথবা বেনামে এই অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ বলছে, তাদের কাছে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তালিকা আছে। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তারা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ধরতে পারছে না। সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডির টাকাসহ ২ ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার এবং আটক করেছিলো। অবশ্য পরে এরা জামিনে মুক্তি পেয়ে গেছে।
বিভিন্ন সূত্রের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নগরীর কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তা, ট্রাভেল এজেন্ট ও মানিচেঞ্চার প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এই অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত। এমনকি সমাজে পরিচিত সমাজসেবী, দানবীর ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত ব্যক্তিরাও দাপটের সাথে হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে একজনের বাসা নগরীর টিলাগড় এলাকায়। কয়েক বৎসর আগে ১৬ লাখ টাকা ও একটি রিভলবারসহ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। বেশ কিছুদিন জেলে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে এখন আবার পুরোদমে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্রমতে, জিন্দাবাজার এলাকার কয়েকটি সরকারী ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, লালদীঘির পাড় ও আম্বরখানার কয়েকটি ব্যাংকের আরো ডজনখানেক কর্মকর্তা এই ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন। এসব ব্যাংক থেকে লেনদেন করা হুন্ডির টাকা গত ছয় মাসে কয়েকবার ছিনতাইও হয়েছে।
অভিযোগ আছে, লালদীঘির পাড়ের কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংকের কিছু উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা হুন্ডি ব্যবসার নেপথ্য কারিগরদের মধ্যে অন্যতম।
জানা গেছে, নগরীর জিন্দাবাজার, তালতলা ও আম্বরখানার বিভিন্ন মার্কেটে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা শতাধিক মানি এক্সচেঞ্জ ও কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সীর মূল ব্যবসা হচ্ছে হুন্ডি। এদের সাইনবোর্ড কেবল ট্রাভেল আর মানি এক্সচেঞ্জ এর।
সিলেট বিভাগের প্রবাসীবহুল উপজেলা বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, জগন্নাথপুর, নবীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও বড়লেখা এলাকায় হুন্ডি ব্যবসায়ীদের শতাধিক সাব এজেন্ট রয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক বাহক শহর আর গ্রামের সাথে হুন্ডি ব্যবসার সেতুবন্ধন হয়ে কাজ করে। এরা মাসিক বেতনভূক্ত কর্মচারী। এদের বেতন ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা। শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে টাকার বান্ডিল নিয়ে এরা ছুটে চলে বিভিন্ন উপজেলার নানা গন্তব্যে। এদের কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং এরাই ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময় গুরুতর আহত হন। একবার ছিনতাইয়ের শিকার হলে এদের চাকরীও চলে যায়। নগরীতে হুন্ডি ব্যবসার সাথে কয়েকটি নামী-দামী কুরিয়ার সার্ভিস ও মোবাইল ব্যংকিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও জড়িত হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ আছে, ইদানিং নগরীতে হুন্ডির অর্থ লেনদেনের পর পরই ওই সব কুরিয়ার সার্ভিস ও মোবাইল ব্যংকিং প্রতিষ্ঠানের লোকজন তা ছিনতাইকারীদের জানিয়ে দিয়ে নেপথ্যে থেকে ছিনতাই করিয়ে নিচ্ছে।
কুরিয়ার সার্ভিস ও মোবাইল ব্যংকিং এর মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসা বেড়ে যাওয়ায় ইদানিং নগরীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হুন্ডির সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এবং পুলিশের তথ্য মতে, সিলেট নগরীতে এখন ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ সহ বিভিন্ন জেলার লোকজন বাড়ী ভাড়া করে হুন্ডি ব্যবসায় নেমে পড়েছে। তারা ভাড়া করা অনেক মহিলাকেও এ কাজে ব্যবহার করছে।
সিলেট অঞ্চলের পুলিশ গত ১০ বছরে অর্ধশত হুন্ডি ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। পরবর্তীতে আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো সমহিমায় পুর্বের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
সিলেটে এসব হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান কিংবা হুন্ডি ব্যবসা বন্ধে পুলিশের তেমন ভূমিকা নেই কেন তাহা জানতে চাইলে- পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, সিলেটে হুন্ডি ব্যবসা চলে বিভিন্ন কৌশলে। নানা জটিলতার কারণে প্রমানসহ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ধরতে পারি না। তবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ আগের চেয়ে অনেক বেশী সক্রিয় এবং আমরা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রতি তীক্ষ্ন নজর রাখছি।
সাম্প্রতিক সময় বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ চারখাই-গদারবাজার রোড থেকে কানাইঘাটের জনৈক হুন্ডি ব্যবসায়িকে এক ব্যাগ টাকাসহ আটক করে। পরবর্তীতে এই হুন্ডির ব্যবসায়ীকে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়েদেয় পুলিশ। উক্ত ঘটনায় পুলিশের দুই এসআইকে ক্লোজকরে সিলেট পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, বড়লেখা, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও জগন্নাথপুরে এখনো অসাধু কিছু ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় রমরমা হুন্ডি ব্যবসা চলছে।