স্টাফ রিপোর্টার:
হঠাৎ করে সামনে এসেছে দেশে ব্যাপক ‘জঙ্গি তৎপরতা’র খবর। এ ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে সিলেটেও। কারণ- সিলেট বিভাগের ৮ যুবক ‘জঙ্গিবাদে’ জড়িয়ে দুর্গম পাহাড়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন- এমন আতঙ্ক ও উদ্বেগের খবর দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে বৃহস্পতিবার রাতে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে দশজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এই ১০ জনের মধ্যে সিলেট বিভাগের ৪ যুবক রয়েছেন।
তারা হলেন- সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ফজলুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আহম্মেদ ওরফে জনু (২৭), গোলাপগঞ্জের আতিকুল আলমের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে বাপ্পি (২৩), সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মৃত সৈয়দ আবুল কালামের ছেলে সৈয়দ মারুফ আহমদ ওরফে মানিক (৩১) ও ছাতকের আব্দুস সালামের ছেলে রুফু মিয়া (২৬)।
বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে সিলেটের ৪ জনসহ এই দশজনকে গ্রেপ্তারের পর পাহাড়ের সশস্ত্র দল ‘কেএনএফ’ বা বম পার্টির সঙ্গে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায়’ চুক্তির খবর সামনে নিয়ে এসেছে র্যাব।
এই এলিট বাহিনী বলছে- কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সাথে ২০২১ সালে জামাতুল আনসারের আমিরের সমঝোতা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফ-এর ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে চুক্তিও হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি কেএনএফ এর সদস্যদের খাবার খরচ বহন করে জামাতুল আনসার।
গ্রেপ্তার দশজনের মধ্যে তিন পাহাড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বান্দরবান র্যাব ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নতুন ওই জঙ্গি দলের যে সদস্যদের এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ছত্রছায়ায়’ প্রশিক্ষণ এবং সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়।
এর ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে র্যাব-৭ ও র্যাব-১৫ অভিযান চালায়। সেই অভিযানে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন- গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাহাড়ের তিনজন কেএনএফ-এর সামরিক শাখার সদস্য। আর বাকিরা জঙ্গি দল জামাতুল আনসারের কর্মী। তাদের কাছ থেকে ৯টি বন্দুক, ৫০ রাউন্ড বন্দুকের গুলি, ৬২টি কেইস কার্তুজ, ৬টি হাত বোমা, ২টি কার্তুজ বেল্ট, ১টি দেশীয় পিস্তল, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, ওয়াকিটকি, ও মানচিত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধারের হিসাব দেওয়া হয় র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে।
র্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণে থাকা জামাতুল আনসারের সদস্য সংখ্যা ৫০ এর বেশি। সংগঠনটির আমিরের নাম মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ। উগ্রবাদী এ সংগঠনে ছয়জন শূরা সদস্য রয়েছেন। তারা অস্ত্র চালনাসহ সশস্ত্র সংগ্রামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গোপনে পরিচালনার জন্য বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম এলাকাকে বেছে নিয়েছে। এজন্য তারা স্থানীয় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তা গ্রহণ করে। তারা পার্বত্য অঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হতে তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করত। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সদস্যদের সাথে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করত।”
বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া কয়েকজন তরুণের বিষয়ে খোঁজ করতে গিয়ে সম্প্রতি ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায়’ নামে নতুন এক জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পাওয়ার কথা জানায় র্যাব।
র্যাব বলছে, উগ্রবাদে আকৃষ্ট হয়ে গত দুই বছরে বাড়ি ছাড়া ৫৫ তরুণের খোঁজ তারা পেয়েছে, তাদের মধ্যে ৩৮ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের ৮ যুবক ও তরুণ রয়েছে।
নতুন এ জঙ্গি সংগঠনকে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি অংশ পৃষ্ঠপোষকতা করছে এবং সেখানে তাদের প্রশিক্ষণও চলছে বলে র্যাব জানায়।
তবে দুই দফায় সিলেটের এ চারজনসহ ওই দলের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার