এডভোকেট মোঃ আমান উদ্দিন:
‘’জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র”। জ্ঞানী গুনি এবং শিক্ষিত সমাজ বিনির্মানে সর্বোচ্চ পেশা শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহন করেন। কেননা পূর্বসূরী পিতা-জোয়াদুর বহমান ১৯৪০ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পুর্ন করে পি.এইচ.জি হাইস্কুলে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেন। শিক্ষাদান করতেন-আরবী এবং ইংরেজী। উভয় বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক হিসাবে ছাত্র সমাজের নিকট সমাহত। তাঁরই অগ্রজ রফিক আহমদ সহ ৫ছেলে এবং ৩মেয়ে। শতভাগ শিক্ষিত পরিবার।৪ ছেলে এবং ৩ মেয়ে প্রায় সকলেই (গ্র্যাজুয়েশন) সম্পুর্ন করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য স্থায়ীভাবে বসবাস করিতেছেন।তাদের ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
রফিক আহমদ ০৩/০৪/১৯৫০ইং তারিখে বিয়ানীবাজারের লাউতা ইউনিয়নের কালাইউরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তৎকালীন বৃটিশ শাসনামালে ক’জনই বা গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। জনাব জোয়াদুর রহমান স্যার গ্র্যাজুয়েশন করে আমলা না হয়ে শিক্ষক হয়ে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন।তারই ছেলে রফিক আহমদ বিয়ানীবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনী পাশ করে, পি.এইচ.জি উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি হন। পাশ করেন ১৯৬৭ সালে এস.এস.সি। এইচ.এস.সি পাশ করেন ১৯৬৯ সনে এম.সি (ইন্টার মিডিয়েট) সরকারী কলেজ থেকে। মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে বি.কম (একাউন্টিং)পাশ করে, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.কম পাশ করেন ১৯৭৬ সালে। ১৯৭৭ সালে যোগদেন বিয়ানীবাজার কলেজের একাউন্টিং এর প্রভাষক পদে। প্রায় ৩৩ বৎসর শিক্ষকতার পেশায় জড়িত থেকে সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।অগনিত ছাত্রের শিক্ষক।তাদের ভালবাসায় সিক্ত।যে দিকে থাকাই সে দিকেই পাই ছাত্র ছাত্রী দের মেলাবন্ধন। প্রবাস জীবনে অনেক দেশ ভ্রমন করেছি। ছাত্ররা শ্রদ্ধা আর ভালবাসা দিয়ে চীর কৃতজ্ঞ চিত্তে ক্যামেরা বন্ধি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রিন্টও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়।স্যারকে অতীথ স্মৃতিচারনের কথাবলতে গিয়ে কান্নায় ভেংগে পড়েন।কতনা কষ্ট দিয়েছি এ সব ছাত্র ছাত্রীদের।কিন্তু ছাত্ররা বলেন, এসব শাসন এর কারনে আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাথা উচু করে স্যারের প্রশংসা করার সুযোগ পেয়েছি। ধন্য শিক্ষকতা।
কর্মজীবনে অনেক পদ পদবীতে কর্মরত ছিলেন। এসব দায়িত্ব সততা ও নিষ্টার সাথে পালন করেছেন। কোন বদনাম শুনিনি। ধর্মপ্রান পরিবারে জন্ম গ্রহন এর কারনে ধর্মীয় মূল্য বোধে বিশ্বাসী থেকে আমৃত্য সমাজ সংস্কারে অগ্রনী ভূমিকা পালন করিতেছেন। বিশাল ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে অযাচিত ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিক কিছু করেননি। সমাজে আপনার বিকল্প শুধু আপনি। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক (মাধ্যমিক), সচিব এবং চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ছিলেন। অন্যদিকে চাকরী তে যোগদান করেন প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক,(কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এর একাউন্টিং এর চেয়ারম্যান), অধ্যাপন করে শিক্ষকতা পেশা থেকে বিদায় নেন।বিদায় নেওয়ার পূর্বে সিলেট সরকারী কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। বর্নাঢ্য শিক্ষকতা জীবনে সততা, ন্যায়নিষ্টা, আন্তরিকতা সহনশীলতা ও ন্যায় নীতির মাধ্যমে শিক্ষা কর্যক্রম চালিয়ে শিক্ষকতার পেশা কে উজ্জ্বল করার আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন এই প্রচার বিমুখ মানুষটি।
জনাব রফিক আহমদ গর্ব করে বলেন, ছাত্র ছাত্রীরা যখন যে অবস্থায় পায় তখন শ্রদ্ধাও ভালবাসা দিয়ে চীর ঋনি করে ফেলে। উল্লেখ্য করতে চাই, স্যারর ছাত্র ছিলেন সাবেক ভূমি সচিব আব্দুল জলিল (চারখাই), সাবেক দুদক পরিচালক ও যুগ্ম সচিব আব্দুল ওয়াদুদ (দাসগ্রাম) অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ নাথ প্রমুখ।
অপরদিকে বড়বোনের মেয়ের জামাই বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী এর কেন্দ্রীয় কমিটির আমীরে জামাত ডাঃ শফিকুর রহমান এবং বাগনা কর্নেল আব্দুল মতলুব।
সামাজিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান আছে প্রফেসর রফিক আহমদ স্যারের। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি প্রতিষ্টা হলে, তখন সর্বসম্মতি ক্রমে সিলেট পল্লীবিদ্যুৎ-১ এর প্রতিষ্টাতা সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। কার্যকাল ছিল ১৯৮৬-১৯৯১ সালে পর্যন্ত। প্রতিষ্টাকালীন সময়ে সভাপতির দায়িত্ব সমিতি তথা বিয়ানীবাজার বাসী যথেষ্ট উপকৃত হয়েছেন। কর্মবীর সরকারী চাকুরী থেকে আবসরে চলে গেছেন ২০১০ সালে। স্যারের বাকী জীবনটা যেন ধর্মের পতি পা বন্ধি থেকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে “কলিমা “এর সাথে শেষ নিঃশ্বাসটুকু নিতে চাওয়া তার একান্ত ইচ্ছা।এ কথাটির সাথে আমি প্রায় ১০বৎসর থেকে এই প্রপ্তির কথা শুনিতেছি। তাঁর সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন কামনা করি। “আমীন”।যদিও আমি স্যারের ছাত্র নহে, তবে ছাত্র সমতুল্য। স্যারের ছাত্র ছাত্রীদের বলতে চাই এই প্রচার বিমুখ মানুষকে এই লেখাটি বেশী বেশী শেয়ার করে দেশ এবং জাতিকে জানিয়ে দিন। এসব আদর্শবান স্যারদের নিয়মিত শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দিয়ে স্মরন করুন।
লেখকঃ সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।