সিলেটThursday , 3 November 2022
  1. আইন-আদালত
  2. আন্তর্জাতিক
  3. উপ সম্পাদকীয়
  4. খেলা
  5. ছবি কথা বলে
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম
  8. প্রবাস
  9. বিচিত্র সংবাদ
  10. বিনোদন
  11. বিয়ানী বাজার সংবাদ
  12. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
  13. ব্রেকিং নিউজ
  14. মতামত
  15. রাজনীতি

জেল হত্যার ৪৭ বছর: এগারো দণ্ডিতের ১০ জনই পলাতক

Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার:
বিচারিক আদালত ও উচ্চ আদালত পেরিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে জাতির ইতিহাসের কলঙ্কময় জেলহত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ৯ বছর আগে। চূড়ান্ত বিচারে ১১ আসামি দণ্ডিত হলেও তাদের মধ্যে মাত্র একজনের দণ্ড কার্যকর হয়েছে এ পর্যন্ত। বাকি ১০ জনই এখনও পলাতক।
সর্বোচ্চ আদালতে আসামিদের তিনজনের মৃত্যুদণ্ড ও আটজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তাদের ছয়জনই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়ও দণ্ডিত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো- রিসালদার মোসলেহ উদ্দীন, বহিষ্কৃত দুই সেনাসদস্য দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাসেম মৃধা।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলো-মেজর (অব.) আহম্মদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন (অব.) কিসমত হাশেম, ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমূল হোসেন আনসার, কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশীদ, লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম, ক্যাপ্টেন (অব.) এমবি নূর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ ও লে. কর্নেল (অব.) এএম রাশেদ চৌধুরী। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আবদুল মাজেদের মৃত্যুদণ্ড গত বছর কার্যকর করেছে সরকার।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন কোথায় আছে সে বিষয়ে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। শুধু যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুইজনের বিষয়ে তথ্য আছে। তাদের মধ্যে কর্নেল (অব.) এমবি নূর চৌধুরী কানাডা এবং লে. কর্নেল (অব.) এএম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে কানাডার আইনের মাধ্যমে না পারলে বিকল্প ব্যবস্থায় হলেও ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের কাছে এই অনুরোধ জানান বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে হাইকমিশনারকে এই অনুরোধ করেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংস হত্যার পর ওই বছর ৩ নভেম্বর রাজধানীতে কেন্দ্রীয় কারাগারে (বর্তমানে জাদুঘর) বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে।

১১ দণ্ডিতদের ১০ জনই পলাতক থাকার পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন বলেন, তাদের ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রত্যাশা করছি তাদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলের সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, পলাতকদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। রায় কার্যকর করতে হবে। এটাই হচ্ছে কথা।

প্রসঙ্গত নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের পরদিন তৎকালীন ডিআইজি (প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করেন। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে জেলহত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে।

তখন এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। দুই বছর তদন্ত শেষে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ ১৯৯৮ সালের ২০ অক্টোবর ২০ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এরপর ছয় বছরের বেশি সময় চলে বিচারকাজ।

জেলহত্যার ২৯ বছর পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিন আসামি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১২ আসামি হলো-লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা, মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম, কর্নেল (অব.) এম বি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) আহম্মদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) কিশমত হাশেম ও ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার।

কারাগারে থাকা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চার আসামি-সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে। ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান। তা ছাড়া আপিল করা চার আসামি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পান। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অন্য আট আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকে।

উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগ দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে খালাস করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

তবে জেলহত্যা মামলায় তারা অব্যাহতি পেলেও ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিনগত রাতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদের (ল্যান্সার) ফাঁসি কার্যকর হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আরেক আসামি মহিউদ্দিন আহমেদেরও (আর্টিলারি) ফাঁসি ওইদিন কার্যকর হয়। তবে মহিউদ্দিন জেলহত্যা মামলার আসামি ছিল না।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল দিনগত রাতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়। মাজেদ জেলহত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।