সিলেটSaturday , 5 November 2022
  1. আইন-আদালত
  2. আন্তর্জাতিক
  3. উপ সম্পাদকীয়
  4. খেলা
  5. ছবি কথা বলে
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম
  8. প্রবাস
  9. বিচিত্র সংবাদ
  10. বিনোদন
  11. বিয়ানী বাজার সংবাদ
  12. বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন
  13. ব্রেকিং নিউজ
  14. মতামত
  15. রাজনীতি

জাতীয় পার্টির জিএম কাদের-রওশন দ্বন্দ্বের নেপথ্যে জামাই-শ্বশুর

Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার:
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের দ্বৈরথ বেড়েই চলছে। দুই বলয়ে বিভক্ত নেতাকর্মীরা। রওশনের অনুসারী নেতাকর্মীদের একের পর এক দল থেকে বহিষ্কারের পর প্রকাশ্য হয় বিভক্তি। তীব্র হয় দেবর জিএম কাদের ও তার ভাবি রওশন এরশাদের দ্বন্দ্ব। যা জাতীয় সংসদ পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবে দুই গ্রুপের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বের নেপথ্য কাহিনী। তারা ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, কাদের ও রওশনের দূরত্ব ও দ্বন্দ্বের নেপথ্যে রয়েছে রওশনপন্থি নেতা জিয়াউল হক মৃধা ও তার মেয়ের জামাই জিএম কাদেরপন্থি নেতা রেজাউল ইসলাম ভূইয়ার দ্বন্দ্ব আর ক্ষমতার লড়াই।

জামাই আর শ্বশুরের দ্বন্দেই জাতীয় পার্টির বিভক্তির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশ। তারা বলছেন, বর্তমানেও শ্বশুর আর জামাইয়ের জন্য কাদের ও রওশনের দূরত্ব বাড়ছে। নেতাকর্মীদের গ্রুপিং জোরালো হচ্ছে। শ্বশুর-জামাইয়ের লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে কাদের ও রওশন এরশাদের সমর্থকদের মাঝেও।

সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা বলছেন, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা ছিলেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। শুধু জামাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বে হারিয়েছেন সংসদ সদস্য পদ। বহিষ্কৃত হয়েছেন পার্টি থেকে। তার মামলাতেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

আর জামাই রেজাউল ইসলাম ভূইয়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব। শ্বশুরের আসন দখল করেও এমপি হতে পারেননি। তবুও অজ্ঞাত কারণে বারবার পদোন্নতি পেয়েছেন দলে। যাদের হাত ধরে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন, তারাও এখন নেতা মানেন তাকে। চেয়ার ছেড়ে দেন।

নেতাকর্মীদের অনেকেই বলছেন, রেজাউল ইসলাম ভূইয়া এখন জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠ এবং দলেও ক্ষমতাবান হিসেবে পরিচিত। তার ইশারায় পদ যায়, আবার তার ইশারায় কেউ কেউ যোগ্যতা না থাকলেও পদ পায়।

শ্বশুর ও জামাইয়ের দ্বন্দ্বের বিষয়ে জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম গতকাল রাতে বলেন, সেই সাপে-নেউলে সম্পর্কটা এখন আর নেই। কিছুদিন আগেও ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি থাকা জিয়াউল হক মৃধাকে দেখতে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া দেখতে গিয়েছিলেন।

জিয়াউল হক মৃধা ও রেজাউল ইসলামের দ্বন্দ্বই কাদের ও রওশনের দূরত্ব বাড়ার কারণ কিনা, জানতে চাইলে মাহমুদ আলম বলেন, এটিই স্পেসিফিক কারণ নয়। এটি একটি অনুসর্গ বা উপসর্গ। মূল কারণ এটিই নয়। তবে অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটিও একটি কারণ। অনেকেই হয়তো এ বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা করে থাকেন, যোগ করেন জাপার দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম।
তবে এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে কথা হয় সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার সঙ্গে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাকে হাসপাতালে দেখতে এলে আর কী হবে। ষড়যন্ত্র করে আমার আসনটি তারা তছনছ করে দিয়েছে। দ্বন্দ্ব বা আপসের কিছু এখন আর নেই।’

জামাই রেজাউল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি (রেজাউল) আত্মীয়। পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে রাজনৈতিক কোনো কথা তার সঙ্গে হয় না।’

রেজাউল-জিয়াউল হক দ্বন্দ্বই কাদের ও রওশনের দ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে কি না— এমন প্রশ্নে জবাবে জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘অনেক কারণের মধ্যে এটাও একটি কারণ হতে পারে। যেমন আমরা পড়েছি, পলাশীযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল। এমন আর কী।’

রওশন ও কাদেরের দূরত্বের কারণ এটি হলে দূরত্ব ঘোচানোর কোনো উদ্যোগ শ্বশুর-জামাই মিলে নেবেন কিনা- জানতে চাইলে জিয়াউল বলেন, ‘বল আমার হাতে নেই। তবে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ করার কোনো উদ্যোগ কেউ নিলে অবশ্যই তা শুভ উদ্যোগ। ঐক্যবদ্ধ করতে অবশ্যই এগিয়ে আসব।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির পদ পায় এখন চাটুকাররা। চাটুকারি করতে পারলেই যোগ্যতা না থাকলেও পদ পাওয়া যায়। এটি চাটুকারদের দলে পরিণত হয়েছে। সিনিয়রদের ডিঙিয়ে চাটুকারদের পদ দেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। এতে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে।’

জিএম কাদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘তিনি হুট করেই আমাকে বাদ দিয়ে দিলেন। এটা হতে পারে না। আমার দোষ আমি রওশনের পক্ষে।’ এটা আমার দোষ হলে জিএম কাদের রওশনকে বাদ দেন না কেন, প্রশ্ন রাখেন জিয়াউল হক মৃধা।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ একাধিক নেতা জানান, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েও হেরে যান রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। এলাকায় তার সমর্থন না থাকায় মহাজোটের প্রার্থী হয়েও ভরাডুবি হয় রেজাউলের। অপরদিকে, ওই নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন জিয়াউল হক মৃধা। তিনি নির্বাচিত হয়ে দল সংগঠিত করেন। চাঙ্গা হয়ে ওঠেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

মূল দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ২০১৮ সালের নির্বাচনে। রেজাউল ইসলাম ভূইয়া নিজের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন ছেড়ে শ্বশুরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচন করতে উঠেপড়ে লাগেন। কিন্ত শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা নিজের আসন ছাড়তে রাজি হননি। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির টপ লেভেলে (উচ্চ পর্যায়) দফায় দফায় বৈঠক হয়। অবশেষে শ্বশুরকে সরিয়ে মহাজোটের মনোনয়ন বাগিয়ে নেন রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। জিয়াউল হক মৃধাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে জামাই ও শ্বশুর দুজনেই পরাজিত হন। তবে জন্ম দেন মুখরোচক নানা গল্পের।

ওই নির্বাচনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আধিপত্য বজায় রাখতে কমিটি গঠন ও সম্মেলন নিয়ে জামাই ও শ্বশুরের দ্বন্দ্ব বাড়তেই থাকে। রেজাউলের দলের কেন্দ্রে ক্ষমতার জোরে কোণঠাসা হয়ে পড়েন শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা। পরবর্তীতে ‘অভিমানে-মনকষ্টে’ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে। সরে যান দল থেকে দূরে।

এদিকে গত ৩১ আগস্ট রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেন। ২৬ নভেম্বর তারিখের জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে ঐক্যবদ্ধ হন বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত ও পদবঞ্চিতরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন জিয়াউল হক মৃধা। রওশন এরশাদ গ্রুপে যোগ দেয়ার কারণে গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয় জিয়াউল হক মৃধাকে। বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। ওই মামলায় গত সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে দল পরিচালনায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।

নেতাকর্মীরা বলছেন, জাতীয় পার্টিতে এরশাদপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি দেখতে চান। তারা মনে করেন, জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির জন্য জামাই ও শ্বশুরের দায় রয়েছে। কেননা শুরু থেকেই তাদের একজন রওশনের খুব কাছের, অন্যজন জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠ। যে দায় তাদের রয়েছে, সেই দায় থেকেই রওশন ও কাদেরের দ্বন্দ্ব নিরসনে নিজ থেকেই তাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন রওশন ও কদেরপন্থি গ্রুপের নেতাকর্মীদের অনেকেই।

সঙ্গে আলাপকালে রওশন ও কাদেরপন্থি নেতাকর্মীরা এই শ্বশুর-জামাইয়ের দ্বন্দ্বই রওশন ও কাদেরের দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন। তবে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরাই চান, ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি। রওশন ও কাদেরের দ্বন্দ্বেরও নিরসন চান তারা।

এ বিষয়ে রেজাউল ইসলাম ভূইয়ার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তাকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কেটে দেন। এসব প্রশ্ন সংবলিত বার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।

তবে রওশনপন্থি একাধিক নেতা বলেন, ‘শ্বশুর-জামাই রাজনীতির মাঠে লোকদেখানো ঝগড়া করেন আর রাতে এক সঙ্গে ঘুমান।’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার