হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার রেলস্টেশনে কলেজছাত্রকে রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যার অভিযোগে এক রেল পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পর গতকাল বুধবার হবিগঞ্জের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ মো. আজিজুল হক এ দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
আদেশে উল্লেখ করা হয়, উক্ত ১০ লাখ টাকা নিহতের পরিবারকে দিতে হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত রওশন আলী কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা দেওয়ানুল ইসলামের ছেলে। যার কনস্টেবল নং-৬৫৩। রায় ঘোষণাকালে আসামি পলাতক ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জেলা আইনজীবীসমিতির সভাপতি অতিরিক্ত পিপি সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
আদালতের পেশকার সৈয়দ গোলাম হাদী জুয়েল জানান, ১৯৯৩ সালের ২১ ডিসেম্বর শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শাহজীবাজার যাবার জন্য লোকাল ট্রেনে উঠেন মাধবপুর উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের মৃত কাজী আব্দুল মমিনের ছেলে, সরকারি বৃন্দাবন কলেজের ছাত্র কাজী আলা উদ্দিন, তার বন্ধু সরোয়ার আলম এবং সাইফুল ইসলাম রিংকু। ট্রেনটি শাহজীবাজারে পৌঁছালে দায়িত্বরত রেল পুলিশ রওশন আলী ও আনসার সদস্য শহিদ এবং রমিজের সাথে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন স্থানীয় চার যুবক। একপর্যায়ে রওশন আলী ক্ষিপ্ত হয়ে রাইফলেন দিয়ে তাদের ওপর গুলি চালান। এতে ঘটনাস্থলেই কাজী আলাউদ্দিন নিহত হন। গুলিতে আলাউদ্দিনের পেটের নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। ওই সময় আহত হন আরো দুজন।
হবিগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার মাধবপুর থানার ওসি নিয়াজ মোহাম্মদকে গুলিবর্ষণকারীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। জিআরপি পুলিশের কনস্টেবল আতাউর রহমান, রওশন আলী, জসিম উদ্দিন, আনসার সদস্য আব্দুল মালেক, আছাব আলী, সহিদ মিয়া ও রমিজ উদ্দিনকে নিরস্ত্র করে গ্রেফতার করেন ওসি। পুলিশের কাছে তাৎক্ষণিক জিআরপি পুলিশের কনস্টেবল রওশন আলী গুলি করার কথা স্বীকার করলে অন্যদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পরে এ ঘটনায় নিহত কাজী আলাউদ্দিনের চাচা কাজী আব্দুল কাদির বাদী হয়ে ১৯৯৩ সালের ২২ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট একটি এজাহার দায়ের করেন। শ্রীমঙ্গল জিআরপি পুলিশের তখনকার ওসি মিজানুর রহমান তদন্ত শেষে ১৯৯৬ সালের ২৬ আগস্ট রেল পুলিশ কনস্টেবল রওশন আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘদিন মামলা চলাকালে পুলিশ কনস্টেবল রওশন আলী উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করে। এরপর হাজিরা না দিলে আদালত তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা ইস্যু করেন।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদালত সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল বুধবার দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
পেশকার আরও জানান, আদালতের আদেশ মতে পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট থানায় প্রেরণ করা হবে।