সিলেটTuesday , 22 November 2022
  1. আইন-আদালত
  2. আন্তর্জাতিক
  3. উপ সম্পাদকীয়
  4. খেলা
  5. ছবি কথা বলে
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম
  8. প্রবাস
  9. বিচিত্র সংবাদ
  10. বিনোদন
  11. বিয়ানী বাজার সংবাদ
  12. বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন
  13. ব্রেকিং নিউজ
  14. মতামত
  15. রাজনীতি

ফের আলোচনায় সিলেটের সেই দুর্ধর্ষ জিয়া

Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার:
দেশে উগ্রবাদী শক্তির পুনরুত্থান ও অপতৎপরতার নেপথ্যে গেল এক দশকে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হকের (মেজর জিয়া) নাম। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের এই শীর্ষ নেতা মুক্তমনা লেখক-ব্লগার হত্যাকাণ্ডের অন্তত ছয়টি ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কয়েকটি মামলায় এই দুর্ধর্ষ জঙ্গির ফাঁসির আদেশও হয়েছে। সর্বশেষ ঢাকার আদালত থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাতেও তাঁর নাম এসেছে। আসলে কোথায় মেজর জিয়া? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।

সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা শহরের মোস্তফাপুর গ্রামে জিয়াউল হকের বাড়ি। সিলেট ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, ২০২০ সালের মার্চে জিয়ার গতিবিধির একটা রেখাচিত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে রয়েছে। অন্তত চারবার তাঁর খুব কাছে পৌঁছেছিল পুলিশ। জিয়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে ছিলেন। ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরের আগে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ঢাকায় আসার টিকিট কাটতে গিয়েছিলেন তিনি। টিকিট না পেয়ে স্টেশনেই হট্টগোল বাধিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘অসৎ লোকজন কালোবাজারি করছে, টিকিট থাকার পরও বিক্রি করছে না।’ ওই ব্যক্তি জিয়া ছিলেন বলে পরে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

এ ছাড়া অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সায়মনের ময়মনসিংহের বাসায় কয়েক মাস আত্মগোপনে ছিলেন জিয়া। বিভিন্ন সময় নানা ছদ্মবেশও ধারণ করেছিলেন তিনি।

গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আওতায় রিওয়ার্ডস ফর জাস্টিস বিভাগ জিয়া ও আরেক জঙ্গি আকরামকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জিয়ার অবস্থানের ব্যাপারে সম্প্রতিক কোনো তথ্য নেই।

অবশ্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল বলেন, মেজর জিয়ার পরিকল্পনায় তার কয়েকজন সহযোগী মিলে দুই জঙ্গিকে আদালত আঙিনা থেকে ছিনিয়ে নেয়।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সঙ্গে যুক্ত হন জিয়া। এবিটি পরে নাম বদলে হয় আনসার আল ইসলাম। ২০১৩ সালে এবিটি প্রধান মুফতি জসিমুদ্দিন রাহমানী গ্রেপ্তারের পর সংগঠনের অন্যতম ‘মাস্টার মাইন্ড’ হিসেবে জিয়ার নাম সামনে আসে। জিয়ার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুরে। পড়ালেখা করেছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। ১৯৯৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ জিল্লুল হকসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা সৌদি আরবে থাকতেন। এর সুবাদে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির আগেই কয়েকবার ওমরাহ করেন জিয়া। উগ্রবাদে জড়ানোর পর তিনি জঙ্গিদের বোমা তৈরিসহ সামরিক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

২০১২ সালে অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে মেজর জিয়াসহ তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে সেনাবাহিনী। ওই বছরের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানানো হয়। পরে তাঁকে ধরিয়ে দিতে পত্রিকায় দেওয়া হয় ছবিসহ বিজ্ঞাপন। এ ঘটনায় জড়িত অন্য দুই কর্মকর্তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

পলাতক জিয়া এবিটি তথা আনসার আল ইসলামে যুক্ত হওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে জঙ্গিদের হাতে খুন হন বেশ কয়েকজন ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, ফয়সাল আরেফিন দীপন, নাজিম উদ্দিন, জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু মাহবুব তনয়। এর মধ্যে মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়, জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন এবং সমকামীদের অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যা মামলায় জিয়াকে মৃত্যুদকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। আর ব্লগার নাজিম উদ্দিন হত্যায় জিয়াকে পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা উল্লেখ করে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিটিটিসি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এবিটির অন্তত আটটি ‘স্লিপার সেল’ তৈরি হয়। প্রত্যেক সেলে সদস্য ছিল চার-পাঁচজন। সেই হিসাবে ৩০ জনের বেশি দুর্ধর্ষ ‘কিলার’ জঙ্গি তৈরি করেছেন তিনি। এই জঙ্গিরাই ব্লগার, লেখক, প্রকাশকসহ মুক্তমনা ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের হত্যা করে। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় টার্গেট কিলিংয়ে জড়িত কয়েক জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকেও জিয়ার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানা যায়। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) একাংশের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগের প্রমাণ মেলে। ২০১৬ সালের ২ আগস্ট মেজর জিয়া ও তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন তখনকার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এর পর ওই পুরস্কারের অঙ্ক দ্বিগুণ করা হয়। তবে কোনোভাবেই জিয়ার খোঁজ মেলেনি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার