কন্ঠ রিপোর্ট:
এইচআইভি এইডস আক্রান্তদের ১৮ শতাংশই বিদেশ থেকে এ রোগ বহন করে দেশে আসছেন। এক্ষেত্রে দেশ থেকে পূর্ণাঙ্গ সুস্থতার রিপোর্ট নিয়ে বিদেশ গেলেও অভিবাসীরা দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকটা বাধাহীনভাবেই এসব রোগী দেশে ফিরছেন। ফলে তাদের মাধ্যমে দেশে ছড়াচ্ছে এইচআইভি এইডস।
গতকাল শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কমিউনিটি ফোরাম অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক মিডিয়া অ্যাডভোকেসি গোলটেবিল বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ এসব তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, ৩০ শতাংশ সাধারণ জনগোষ্ঠী এইচআইভি এইডসের ঝুঁকিতে আছেন, যারা পূর্ববর্তী সময়ে এইডস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ১২ লাখ ৪১ হাজার পরীক্ষা করা হয়েছে, এর মধ্যে ৯ লাখ ৫৫ হাজারই বিদেশগামী। অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর জাহিদ আনোয়ার বলেন, দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়ে এইডস আক্রান্ত হয়ে কত মানুষ মারা গিয়েছে সেই তথ্য তাদের কাছে আছে; কিন্তু আক্রান্তের যথাযথ তালিকা নেই।
বক্তারা বলেন, এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ভুক্তভোগীদের পূর্ণ মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে দেশে এইডস আক্রান্ত (পিএলএইচআইভি) ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থ জীবন যাপনে ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সিক্সটিন ডেইস অব অ্যাকটিভিজম উপলক্ষ্যে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক এসব দাবি জানানো হয়। প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিক্সটিন ডেইস অব অ্যাকটিভিজম দিবস পালিত হয়। এ বছর বাংলাদেশে সিক্সটিন ডেইস অব অ্যাকটিভিজমের আওতায় নারীর প্রতি সহিংসতা দিবস, বিশ্ব এইডস দিবস ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে।
বৈঠকে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো পিএলএইচআইভি জনগোষ্ঠীর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করে প্রত্যেককে চিকিত্সার আওতায় আনা, ওষুধের পাশাপাশি তাদের অন্যান্য চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য ও বৈষম্যহীন করা, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আরো দায়িত্বশীল আচরণ করা, পিএলএইচআইভিদের সঙ্গে যে কোনো ধরনের হয়রানি ও বৈষম্যমূলক আচরণ পরিহার করা, তাদের বৃত্তিমূলক ও মানানসই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় আনা, নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাউনসেলিংয়ের ব্যবস্থা করা, তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে এইচআইভি সচেতনতামূলক কার্যক্রমে যুক্ত করা, অভিবাসীদের বিদেশে যাওয়ার আগেই এইচআইভি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানুষ হিসেবে পূর্ণ মর্যাদা দেওয়া।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি ক্লোজ ওয়ার্কিং গ্রুপ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, এইডস আক্রান্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়ে সংশিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। ওয়েজ আর্নার ওয়েলফেয়ার বোর্ড ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জাহিদ অনোয়ার এইচআইভি আক্রান্ত অভিবাসীদের স্বাস্থ্যবিমায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ করেন। ইউএনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সায়মা খান বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশসমূহে এইচআইভি আক্রান্তের হার বেশি। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুর মানুষ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশসমূহে কাজের জন্য যায়। এটি একটি বড় ঝুঁকির বিষয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওকাপ ও কনভেনর কমিউনিটি ফোরাম অব বাংলাদেশের চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার