বড়লেখা প্রতিনিধি:
উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে প্রায় ১২ বছর আগে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছিলেন কাওছার হামিদ আলী (৩৫)। সেখান থেকে প্রায় সাত বছর পর আলী পাড়ি জমান ফ্রান্সে। এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় একযুগ। আলীর আর বাড়ি ফেরা হয়নি। আলীর হয়তো স্বপ্ন ছিল প্রতিষ্ঠিত হয়ে কোনো একদিন দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরে হয়তো বিয়ে করে নতুন স্বপ্ন বুনবেন। বাবা-মাও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে হয়তো এমন স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু কারওরই স্বপ্ন আর পূরণ হবে না কোনোদিন। কারণ আলীর প্রাণপ্রদীপ যে নিভে গেছে চিরতরে। সেই আলী ফিরছেন দেশে।
ফ্রান্সে খুন হওয়ার প্রায় দেড়মাস পর কাওছার হামিদ আলীর লাশ দেশে আসছে আজ। ফ্রান্সে আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত শুক্রবার তার লাশ বিমানে দেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ওইদিন ফ্রান্সের অভারভিলা বাংলাদেশি জামে মসজিদে আলীর প্রথম জানাজা হয়েছে। আলী মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে।
জানা গেছে, গত ২০শে সেপ্টেম্বর রাতে প্যারিসের মাখদরমি এলাকায় উবারের আইডি নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে কয়েকজন যুবক প্রথমে কাওছার হামিদ আলীকে ঘাড়ে আঘাত করে। এরপর ঘাতকরা তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের উপরে ফেলে দেয়। এতে আলী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৩ দিন তিনি কোমাতে ছিলেন। এরপর ১৩ই অক্টোবর মারা যান। গত ২০শে অক্টোবর ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আলীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার। এদিকে আলীকে হত্যায় জড়িতদের ধরতে ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে প্রবাসী একটি সূত্র জানিয়েছে। স্বজন ও প্রবাসীরা আলীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। ফ্রান্সের সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ জানিয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে আলীর লাশ দেশে পাঠানো হয়েছে। সোমবার ভোরে লাশ দেশে পৌঁছাবে। আলীর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতরা পলাতক রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের গ্রেপ্তারের জন্য ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আলী কবে বিদেশ গিয়েছেন জানতে চাইলে আলীর বাবা আবুল হোসেন রোববার বিকালে তিনি ঢুকরে কেঁদে ওঠে বলেন, প্রায় ১২ বছর আগে সে লেখাপড়ার জন্য লন্ডন যায়।
সেখান থেকে প্রায় ৭ বছর পর ফ্রান্সে পাড়ি জমায়। প্রায় একযুগ কেটে গেছে। সে আর দেশে আসেনি। আশা ছিল দেশে এলে তাকে বিয়ে দিবো। কিন্তু তাতো আর হবে না কোনোদিন। সোমবার ভোরে আমার ছেলের লাশ দেশে এসে পৌঁছাবে। আমি লাশের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছি।