সিলেটThursday , 22 December 2022
  1. আইন-আদালত
  2. আন্তর্জাতিক
  3. উপ সম্পাদকীয়
  4. খেলা
  5. ছবি কথা বলে
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম
  8. প্রবাস
  9. বিচিত্র সংবাদ
  10. বিনোদন
  11. বিয়ানী বাজার সংবাদ
  12. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
  13. ব্রেকিং নিউজ
  14. মতামত
  15. রাজনীতি
সবখবর

পাহাড়ে এক বছর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর গ্রেফতার হলেন সিলেটের তুহিন!

Link Copied!

Manual4 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল ইন্দাল শারক্বীয়ার দুই সদস্য দলছুট হয়ে প্রায় এক মাস হেঁটে পাহাড় থেকে সমতলে আসেন। তারা এক বছর ধরে নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। সমতলে আসার পর গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) হাতে গ্রেপ্তার হন এই দুই জঙ্গি।

গ্রেপ্তাররা হলেন— সাইফুল ইসলাম তুহিন (২১) ও মো. নাঈম হোসেন (২২)। এর মধ্যে তুহিনের বাড়ি সিলেটে ও নাঈমের বাড়ি চাঁদপুরে।

Manual1 Ad Code

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, কুকি-চিনের সাহায্যে নতুন জঙ্গি সংগঠন পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তৈরি করেছিল। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায়। অভিযানের ফলে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির অনেক সদস্য গ্রেপ্তার হয়, অনেকে আবার গ্রুপে গ্রুপে পাহাড়ে অবস্থান নেয়। আবার কেউ কেউ সমতলে ফিরে আসার চেষ্টা করে এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পাহাড় থেকে সমতলে আসা এমনই দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের করেছে সিটিটিসি। গ্রেপ্তার দুই জন পাহাড়ের ক্যাম্পে প্রায় এক বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অনেকেই স্বেচ্ছায় গেলেও অনেককে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পে গিয়ে অনেকেই ফিরে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু শত চেষ্টা করেও সেখান থেকে বের হতে পারেননি। সিলেট থেকে সাইফুল ইসলাম ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর হিজরতের উদ্দেশে বের হয়ে যান। সাইফুল ইসলাম একটি কওমি মাদ্রাসায় পড়তেন, সেখানের একজন ইমামের মাধ্যমে তিনি উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরতে যান। তবে হিজরতে গিয়ে কি করবেন সেটি সাইফুল জানতেন না।

Manual7 Ad Code

তিনি বলেন, ১৫ নভেম্বর সিলেট থেকে একটি মাইক্রোবাসে সাইফুলসহ তিন জন প্রথমে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তাদের আরও চার জন হিজরতকারীর সঙ্গে দেখা হয়। সেখান থেকে তারা বাসে করে বান্দরবানের দিকে রওনা হন। রাস্তায় তাদের ফোন ও বাসা থেকে নিয়ে আসা টাকা সংগঠনটির এজেন্ট তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়। তাদের বলা হয়েছিল, সেখানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তারা ব্যবসাও করতে পারবেন, তাই তারা টাকা নিয়ে এসেছিলেন। যাত্রা পথে তাদের চুল ও দাড়ি কেটে ফেলা হয়। পরে সাইফুল ইসলাম বান্দরবানে গিয়ে দেখেন, তাদের সঙ্গে একই বাসে আরও ১০ জন হিজরতকারী এসেছিলেন। বান্দরবান থেকে তারা থানচি যান, সেখান থেকে এক রাতে ১২ ঘণ্টা হেঁটে প্রথম প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পৌঁছান।

ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, অন্যদিকে মো. নাঈম হোসেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। করোনার সময় তিনি ইনস্টিটিউশন বন্ধ থাকায় বাড়ি চলে যান। বাড়ি গিয়ে বিশুদ্ধভাবে কোরআন শেখার জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হন। সেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এক হুজুরের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয় নাঈম। পরে তিনি ঢাকায় হলে চলে আসেন। হল থেকে তিনি কাউকে কিছু না বলে গত বছরের অক্টোবর মাসের ২ তারিখে কুমিল্লায় সেফ হাউজে চলে যান। সেখান থেকে নাঈম একইভাবে আরও ৮-১০ জনের সঙ্গে থানচি হয়ে পাহাড়ের প্রশিক্ষণ শিবিরে চলে যান।

Manual8 Ad Code

ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ক্যাম্পে ডেইলি রুটিন মোতাবেক সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো হিজরতকারীদের। সারা দিন তারা বিভিন্ন শারীরিক ও অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিতেন, রাতে তাদের সংগঠনের বিভিন্ন সিনিয়র নেতারা বয়ান দিত। এই বয়ানের মাধ্যমে তারা অল্প কিছুদিনের মধ্যে বুঝতে পারেন শামিন মাহফুজ এই সংগঠনের প্রধান। শামিন মাহফুজ ক্যাম্পের যেই কক্ষে থাকতেন সেখানে সশস্ত্র পাহারা থাকত। কুকি-চিনের প্রধান নাথান বম মাঝে মধ্যে ক্যাম্পে এলে শুধু শামিন মাহফুজের কক্ষে গিয়ে আলোচনা করতেন। প্রথম ক্যাম্পটিতে ৭-৮ দিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর শামিন মাহফুজ সিদ্ধান্ত নেয় তারা মিজোরাম সীমান্ত লাগোয়া কোনো পাহাড়ে নয়ত মিজোরামের ভেতরে কোথাও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করবে। কিন্তু সেখানে যেতে না পেরে তারা ফিরে আসে। এটি কুকি-চিনের ক্যাম্প ভেবে পরে তাদের ক্যাম্পে একদিন জেএসএস হামলা করে। পরে শামিন মাহফুজ সেখান থেকে আরেকটি পাহাড়ে গিয়ে দ্বিতীয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করেন।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এরই মধ্যে সাইফুল ইসলাম তুহিনসহ সিলেট থেকে আসা তিন জন এই প্রশিক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ না করে বিদ্রোহ করেন। তারা সেখান থেকে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের বিদ্রোহের বিষয়টি টের পেয়ে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় সংগঠনটির কমান্ডাররা। তাদের সারাদিন গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হতো ও দোররা মারা হতো। পর একপর্যায়ে তারা নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে আবার সংগঠনের কার্যক্রমে ফিরে আসতে চান। পরে তাদের দিয়ে সারাদিন ক্যাম্পের সব কাজ করানো হতো।

তিনি বলেন, পরে অক্টোবর মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যখন পাহাড়ের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অভিযান চালায় তখন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্রুপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাইফুল ও নাঈম হাঁটতে হাঁটতে একটি মার্মা গ্রামে গিয়ে উঠে। পরে ওই গ্রামের লোকজন তাদের ধরে কুকি-চিনের কাছে দিয়ে দেয়। কুকি-চিন তাদের পরিচয় জানতে পেরে এক মাস আটকে রেখে নির্যাতন করে। পরে কুকি-চিন বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে নাঈম ও সাইফুলকে ছেড়ে দেয়। শেষে তারা সূর্য ও বাড়িঘর দেখে দেখে দিক নির্ণয় করে এক মাস হেঁটে বান্দরবান শহরে এসে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। ২৫ নভেম্বরে তারা বান্দরবানে আসেন। এরই মধ্যে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়। গোয়েন্দা নজরদারির একপর্যায়ে বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সিলেট থেকে সাইফুল ইসলাম ও ঢাকা থেকে নাঈমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের আদালতে রিমান্ড আবেদন করে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তাদের কাছ থেকে জানা হবে।

Manual5 Ad Code

নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রধান শামিন মাহফুজ ও তার পরিবার কোথায়— জানতে চাইলে ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আমদের তদন্ত চলছে।

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code