আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের রাজধানী বোস্টনে পুলিশের গুলিতে সৈয়দ ফয়সাল আরিফ নামের এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কেমব্রিজ সিটি হল প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি আরিফের সহপাঠীরাও অংশ নেন সেখানে।
বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা ও বস্টন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল ইউসুফ সমাবেশে বলেন, ‘বোস্টন হচ্ছে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের সিটি। আমরা কখনো কোনো দাঙ্গায় লিপ্ত হইনি। তবু কেন আমাদের টার্গেট করা হয়েছে? কেন আমাদের নিষ্পাপ আরিফের বুকে বিদ্ধ হবে পুলিশের বুলেটে।’
গত ৪ জানুয়ারি বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১ টার দিকে বোস্টনের কেমব্রিজ এলাকার চেস্টনাট স্ট্রিটে ঘটে নিহত হন ফয়সাল। পরের দিন বৃহস্পতিবার ম্যাসাচুসেটসের মিডলসেক্স জেলার শীর্ষ সরকারি আইনজীবী (ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি) ম্যারিয়েন রায়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১ টার দিকে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের হটলাইন নাম্বারে (৯১১) টেলিফোন করেন কেমব্রিজের এক বাসিন্দা। ফোনে তিনি বলেন, এক তরুণ খালি গায়ে ঘরের জানালা দিয়ে লাফিয়ে রাস্তায় নেমেছে, তার হাতে বড় আকারের একটি ছুরি রয়েছে। ওই তরুণ নিজেকে ছুরিকাঘাতে আহত করার চেষ্টা করছে বলেও ফোনকলে পুলিশকে জানান সেই বাসিন্দা।
‘ফোন পাওয়ার পর প্রায় ১ ডজন পুলিশ সদস্য চেস্টনাট স্টিটে যান এবং সেখানে ওই তরুণকেও দেখতে পান। তারা ওই তরুণকে থামতে বলেছিলেন, কিন্তু পুলিশের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে চেস্টনাট স্ট্রিট দিয়ে দৌড়াতে থাকেন ওই তরুণ। পুলিশ তার পিছু নিলে এক পর্যায়ে তিনি ছোরা উঁচিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে যান।’
‘আত্মরক্ষার্থে তখন পুলিশ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। তারপর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তাকে।
তবে মার্কিন প্রশাসনের এই ব্যাখ্যা মেনে নিতে পারছেন না ফয়সালের বাবা মো. মুজিব উল্লাহ। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘আমার ছেলের কোনো খারাপ অভ্যাস ছিল না। এমনকি আমাদের পরিবারের কেউ কোনো অপরাধে জড়ায়নি কখনো। দেশেও আমাদের পরিবারের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। ছেলেকে গুলি করে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
ফয়সালের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাতমারা ইউনিয়নে। ২০১৫ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের বোস্টন ক্যাম্পাসে কম্পিউটারবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন ফয়সাল।
আরিফের বাবা মো. মুজিবউল্লাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ও ছিল খুবই মেধাবি। আশা করেছিলাম সে ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তার হবে কিন্তু এখন সব আশা শেষ হয়ে গেল।’
এদিকে, স্থানীয় একটি টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ওই এলাকার বাসিন্দা এক নারী নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে বলেছেন, আরিফের হাতে কোনো ছুরি তিনি দেখেননি।
এ পরিস্থিতিতে পুলিশ ও ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির পক্ষ থেকে সবার কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে; জানতে চাওয়া হয়েছে পুলিশ গুলি করার সময় আরিফের হাতে আদৌ কোনো ছুরি ছিল কিনা।
কেমব্রিজের পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন ইলো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যে কোনো মৃত্যুই বেদনাদায়ক। আমরা আরিফের মৃত্যুকেও সহজভাবে নিচ্ছি না। সরেজমিনে তদন্ত চলছে। যদি অন্যায়ভাবে গুলি চালানো হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
ফয়সালের মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কেমব্রিজের সিটি হল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজন। ‘স্পিক আপ, স্ট্যান্ড আপ’ ‘জাস্টিস ফর ফয়সাল’, ‘স্টপ পুলিশ ব্রুটালিটি’ স্লোগানে বোস্টনের কেমব্রিজ শহরে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
কমিউনিটির নেতা ও বস্টন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইউসুফ সাংবাদকিদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে যে পুলিশের বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির মধ্যে অন্তত পাঁচটি বিদ্ধ হয়েছে আরিফের বুকে। এ অবস্থায় নীরব থাকার অবকাশ নেই। আমাদের সংঘবদ্ধ আওয়াজ ওঠাতে হবে এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে।’