সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে সুনামগঞ্জে চলছে তিন দিন ব্যাপী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। ঘোড়দৌড়ে অংশ নিতে সুনামগঞ্জের বাইরে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ অন্যান্য জেলা উপজেলা থেকেও ঘোড়া নিয়ে এসেছেন শৌখিন ঘোড়া মালিকরা।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা চলবে আগামী মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) পর্যন্ত। তিন দিনের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে কয়েক শতাধিক ঘোড়া। বিশাল এই ঘোড়দৌড় দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী।
বোরো চাষাবাদ মৌসুমে কৃষকদের বিনোদনের মাধ্যমে উৎসাহিত করতে এই আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং গ্রামের মানুষের বিনোদনের জন্য ঘোড়দৌড়কে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
গরুর লাড়াই, ঘোড়দৌড়, কাবাডি, কুস্তি সহ বিভিন্ন খেলা গ্রামীণ ঐতিহ্যের অন্যতম একটি অংশ। এসব আনন্দ আয়োজনের মধ্যে উৎসব বিরাজ করে গ্রামে গ্রামে। তার মধ্যে অন্যতম একটি ঐতিহ্য ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। হাজার হাজার গ্রামীণ মানুষের বিনোদনের খোরাক এই আয়োজন। প্রাচীনকাল থেকেই এই প্রতিযোগিতা চলে আসছে।
এরই অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জ শহরতলির মোল্লপাড়া ইউনিয়নের বেতগঞ্জ বাজারের পাশের জালালপুর ও লালপুরের মধ্যবর্তী মাঠে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছে সোনার হরিণ, উড়ালপঙ্কী, পাগলা ঘোড়া, সমীর বাংলা, অচিনপাখি, পাখির বাচ্চা, আলিম বাদশা, আমিন রাজা সহ নানা আকর্ষণীয় নামের ঘোড়া এসেছে। সাদা, লাল, কালো বিভিন্ন রঙের এসব শতাধিক ঘোড়ার প্রতিযোগিতা দেখতে মানুষের ঢল নেমেছে মাঠে। ঘোড়দৌড় আয়োজনের কয়েক যুগের ইতিহাস রয়েছে এই জায়গায়। গেল দুই বছর করোনার কারণে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার বেশ ঘটা করে করা হয়েছে আয়োজন। এমন আয়োজন অব্যাহত রাখার দাবি করেছেন স্থানীয় মানুষ এবং দর্শনার্থীরা।
জামালগঞ্জের ভীমখালি থেকে দৌড়ের ঘোড়া ‘সোনার বাংলা’ নিয়ে প্রতিযোগিতায় এসেছেন সাব্বির আহমদ। তিনি বলেন, যেখানেই ঘোড়দৌড় হয়, আমন্ত্রণ পেলেই যাই। এখানে এসেছি। তিন দিনের এই উৎসবে যারা আসবেন আনন্দ করেই কাটাবেন।
শান্তিগঞ্জের জীবধারা থেকে আসা আলা উদ্দিন আহমদ বলেন, মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ঘোড়া নিয়ে মেলায় মেলায় যাই। বৈশাখে ফসল ভালো হলে জৈষ্ঠ্য মাসেও হয় ঘোড়দৌড় উৎসব।
সুনামগঞ্জ শহরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী শফিকুল ইসলাম রোববার দুপুর থেকে ঘোড়দৌড় দেখার জন্য বেতগঞ্জ বাজারের পাশের মাঠে গেছেন। তিনি বলেন, বহুদিন ধরেই ঘোড়দৌড় দেখার ইচ্ছা ছিল আমার। সুযোগ পেয়েছি, শহরের পাশের এই উৎসবে চলে এসেছি। এমন আয়োজন অব্যাহত থাকলে নতুন প্রজন্ম পুরনো সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে জানবে।
ঘোড়দৌড় আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা, সকলকে বিনোদন দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন। আশা করি সকলে এতে সহযোগিতা করবেন। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শতাধিক ঘোড়া এসে আশপাশের গ্রামে ও মাঠে অবস্থান নিয়েছে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, এক সময় ঘোড়া বাহন হিসেবেই ব্যবহার হতো। পৃথিবী আধুনিক হওয়ায় এখন আর ঘোড়া বাহন হিসেবে ব্যবহার হয় না। তাই ঘোড়া কমে যাচ্ছে। শৌখিন ঘোড়া মালিকরা এখন ঘোড়দৌড়ে ঘোড়া নিয়ে আসেন। ঘোড়দৌড়ের জন্যই ঘোড়া পালন করেন। গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং সকলকে বিনোদনে উৎসাহিত করতে ঘোড়দৌড়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।