নিজস্ব প্রতিবেদক:
লিগ পর্ব শেষে আজ রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে বিপিএলের উত্তেজনাপূর্ণ প্লে-অফ। এ ধাপে সিলেট স্ট্রাইকার্সের প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আজকের দ্বিতীয় খেলায় প্রথম কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি হবে দল দুটি। শক্তির ক্ষেত্রে কুমিল্লার চাইতে সিলেটকে এগিয়েই রাখছেন দলটির সমর্থকরা।
ব্যর্থতাই যেখানে ছিলো সিলেটের নিয়তি, সেখানে টুর্নামেন্টের শুরুতে সিলেট স্ট্রাইকার্সের পক্ষে বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়া ছিল বৃথাচেষ্টা। বিপিএলে সিলেটের লিগ পর্ব শেষে পাশার দান উল্টেছে। সিলেটের পক্ষে বাজি ধরার লোক এখন অনেক। আধিপত্যের শুরু সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার হাত ধরে। তার নেতৃত্বেই টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শীর্ষস্থান ধরে রেখে প্লে অফ নিশ্চিত করে সিলেট।
২০১৩ সালের পর আবার প্লে অফ খেলবে দলটি। বাকি আসরগুলোতে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজির জায়গা ছিল টেবিলের তলানির দিকে। সাফল্যের আশায় বুক বেঁধে থাকা সমর্থকদের হৃদয় ভাঙে বারবার। সেই দুঃখ ঘুঁচিয়ে এবার আরো অনেক দুরের স্বপ্ন দেখছে সিলেট।
এবারের লিগ পর্বে ১২ ম্যাচে ৯ জয়ে ১৮ পয়েন্টে শীর্ষ দুই নিশ্চিত করে প্লে অফে উঠেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। তাদের সাফল্যের মূল নিয়ামক দেশি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স। বিদেশিদের অবদান থাকলেও অধিকতর দ্যুাতি ছড়িয়েছেন দেশি ক্রিকেটাররা।
প্লেয়ার ড্রাফট কিংবা সরাসরি চুক্তিতে মাশরাফি ও মুশফিকুর রহিম ছাড়া তেমন কোনো দেশি বড় নাম নেই সিলেট দলে। তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসানদের মতো ক্রিকেটাররা আছেন। বিদেশিদের মধ্যে মোহাম্মদ আমির, ইমাদ ওয়াসিম, থিসারা পেরেরারা অবশ্য বড় নাম। পুরো দলের মধ্যে অধিনায়ক মাশরাফির তৈরি করা জয়ের ক্ষুধা সাফল্যের গোপন চাবিকাঠি।
দলটির ব্যাটিং কোচ তুষার ইমরান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কিছু কথাবার্তা আছে মাশরাফির ভেতরে যা ক্রিকেটারদের ইন্সপায়ার করে। তাদের মনের ভেতর কাজ করে মাশরাফি বলছেন, আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এখানেই অন্যান্য ক্যাপ্টেনের চেয়ে মাশরাফি এগিয়ে।’
তিনি বলেন- বিপিএলে অধিনায়ক হিসেবে চার শিরোপা জেতা মাশরাফির জন্য তরুণ দেশি ও অভিজ্ঞ বিদেশিদের সমন্বয়ে গড়া দল পরিচালনা নাকি সহজ ব্যাপার। এমনকি অধিনায়ক মাশরাফি দল গঠনেও ছিলেন নেতা। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের কাছে পেয়েছেন সর্বোচ্চ স্বাধীনতা। তাতেই কাগজে-কলমে সেরা চারে না থাকলেও পয়েন্ট টেবিলে তারা শীর্ষে। ‘বিপিএলের সাকসেসফুল ক্যাপ্টেন। ও জানে আসলে কীভাবে সামলাতে (বিদেশি ক্রিকেটার) হয়। ম্যানেজমেন্টে যারা আছে তারাও মাশরাফিকে আস্থায় নিয়েছেন। কাগজে-কলমে আমরা হয়তো আহামরি কোনো দল ছিলাম না। শুরুতে অনেকেই আমাদের পাঁচ নম্বর দল হিসেবে গণ্য করেছিল।’
তুষার বলেন, কাগজে-কলমের পয়েন্ট টেবিলের সঙ্গে মাঠের কোনো সম্পর্ক নেই। বড় নামহীন দলটি নিয়ে সমালোচনা বন্ধ করতে মাশরাফি দলে তৈরি করেন সাফল্যের জন্য ক্ষুধা। ও সব বয়স্ক প্লেয়ার নিয়েছে, দল পারফর্ম করতে পারবে না। এটাই সবার ধারণা ছিল। মাশরাফির জন্য প্লেয়ারদের মধ্যে জয়ের ক্ষিধে তৈরি হয়। তাদের মধ্যে দেখিয়ে দেব এমন ভাবনা ছিল।’
দলের বিদেশি ক্রিকেটাররাও মাশরাফির দেখানো পথেই হেঁটেছেন। তুষার ইমরান সেই প্রসঙ্গে বলেন- ওরাও (বিদেশি ক্রিকেটাররা) রিড করে মাশরাফি যখন ওদেরকে কাজে লাগাতে চান, সেরাটা দিতে হবে। সব মিলিয়ে দেশি-বিদেশিদের এক সুতায় গাঁথতে পারার এই সাফল্যই সিলেটের সেরা হয়ে প্লে অফে ওঠার নিয়ামক।
পেসারই শক্তি:
পুরো আসরেই সিলেট স্ট্রাইকার্সের বোলিংয়ের মূল ভরসা পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির ও স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম। দুজনই বল হাতে সিলেটের প্রতিপক্ষ শিবিরে ছড়িয়েছেন ভীতি। সঙ্গে তরুণ রেজাউর রহমান রাজা ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। লিগ পর্বে তারাই সিলেটের সেরা বোলার। প্লে অফে সেরা চারের দুজনকে পাচ্ছে না সিলেট। ইমাদ ওয়াসিম ও আমির ফিরে গেছেন দেশে।
দেশে ফেরার আগে সিলেটের সেরা বোলারের তকমা নিজের করে নেন মোহাম্মদ আমির। ১১ ম্যাচে ১৯.২৮ গড়ে শিকার করেন ১৪ উইকেট।
সিলেটের হয়ে দ্বিতীয় সেরা বোলার তরুণ রেজাউর রহমান রাজা। ৮ ম্যাচে ১৯.৮৪ গড়ে নেন ১৩ উইকেট। টুর্নামেন্টে যৌথভাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। আসরের প্লে অফ পর্বে তার ওপরই ভরসা করবে সিলেট। ইমাদ ওয়াসিম ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজারও শিকার সমান ১২ উইকেট। রুবেল হোসেন ও তানজিম হাসান সাকিবরাও খুব একটা পেছনে নেই। এ দুজনের শিকার যথাক্রমে ৭ ও ৫ উইকেট। সিলেট শিবিরে অবাক করা বিষয় হলো, সেরা সাত বোলারের ছয়জনই পেসার। দলটি বোলিংয়ে সাফল্য পাচ্ছে পেসারদের মাধ্যমে।
ব্যাটে সেরা দেশিরা :
সিলেট স্ট্রাইকার্সের সাফল্যের রথটা সুদীর্ঘ ১২ ম্যাচ ধরে টেনেছেন দলের ব্যাটাররা। নামগুলোও বেশ চেনা। তৌহিদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, জাকির হাসান ও মুশফিকুর রহিম। সিলেটের প্রত্যেক ম্যাচে এই নির্দিষ্ট কয়েকজনের মধ্যে কেউ না কেউ জ্বলে উঠেছেন। এনেছেন দলের জয়। তাতেই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান তাদের। পয়েন্ট বাড়ানোর পাশাপাশি দলের নেট রানরেট ০.৭৩৭-এ নিতেও বড় ভূমিকা রাখেন।
সিলেটের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি রান এসেছে তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটে। শুধু সিলেট নয় এই আসরে তার চেয়ে বেশি রান নেই আর কারও। ১০ ম্যাচে ১৪৬.৫১ স্ট্রাইক রেট ও ৪৭.২৪ গড়ে করেন ৩৭৮ রান। আছে পাঁচ হাফসেঞ্চুরির ইনিংস। এর মধ্যে ইনজুরির কারণে দুই ম্যাচে মাঠের বাইরেও ছিলেন। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট হেসেছে ৩৭৪ রানে। শান্ত এই রান তুলেছেন ১১০ স্ট্রাইক রেটে। পরের তিন অবস্থানে থাকা মুশফিকুর রহিম (২৪৮), জাকির হাসান (২৩২) ও থিসারা পেরেরারার (১৪৪) ব্যাটও দলের প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠছে।
বিপিএলকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে সিলেট :
টুর্নামেন্ট নিয়ে সমালোচনার কমতি নেই এমনিতেই। চারপাশে নানা আলোচনা। তবুও বিপিএলকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে সিলেট। বিপিএলের সিলেট পর্বে গ্যালারিতে স্বাগতিক সিলেট স্ট্রাইকার্সের সমর্থনে গোলাপি আভা দেখা গেছে, চিৎকার ছিল পুরো ম্যাচজুড়ে। বিপিএলে এমন পরিবেশ দেখা খুব একটা সহজ কথা নয়।
শেষদিকে একটি ম্যাচ দেখতে সিলেট এসেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বোধ হয় এই কথাটাই সবচেয়ে বেশি শুনেছেন ‘সিলেটে আরও বেশি ম্যাচ চাই’। প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন তিনি। গ্যালারি ভর্তি দর্শক, তাদের সমর্থন, টিকিটের জন্য হাহাকার; এসব দেখিয়েছে বিপিএলের আবেদনও। বিসিবি চাইলে যে বাজারটা বড় করতে পারে, জানিয়েছে সেই সম্ভাবনার কথাও।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার