কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
প্রেম মানে না জাত কূল। মানে না কোনো বাধা-বিপত্তি। তাদের দেশ ভিন্ন, ভাষাও আলাদা। বড় হয়েছেন পৃথক সংস্কৃতিতে। এমন অনেক অমিল সত্ত্বেও এক হয়েছেন ভালোবাসার টানে। প্রথমে পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। তারপর প্রেম। এরপর সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে। আড়াই হাজার মাইল দূর থেকে প্রেমের টানে প্রেমিককে বিয়ে করতে তরুণী ছুটে এসেছেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে প্রেমিক দ্বীন মোহাম্মদের কাছে। ছুটে এসে এ সত্যকেই আরেকবার প্রমাণ করলেন মালয়েশিয়ান তরুণী মিসনেওয়াতী বিনতে মিসকে (২৫)। তিনি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরের ক্যালকলামপরায় সিরাম্বুল গ্রামের মিসকে বিন আলীর মেয়ে।
প্রেমিক দ্বীন মোহাম্মদ (২৮) কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ পৌরসভার ঘোনাপাড়া এলাকার মো. রেনু মিয়ার ছেলে।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) এক মাসের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ওই তরুণী। ওই দিনই তিনি প্রেমিক দ্বীন মোহাম্মদের গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ান তরুণী আসার খবর আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাকে এক নজর দেখতে প্রেমিক দ্বীন মোহাম্মদের বাড়িতে ভিড় জমান বিভিন্ন বয়সের উৎসুক নারী-পুরুষ।
প্রেমিক যুবক দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, আমি কর্মসংস্থানের সন্ধানে গত ৯ বছর আগে মালয়েশিয়া যাই। প্রবাস জীবনের শুরুটা আমার খুব কঠিন ছিল। গত ২০১৯ সালে কুয়ালালামপুর শহরে একটি পার্সের দোকানে চাকরির সময় পরিচয় হয় মিসনেওয়াতী বিনতে মিসকের সঙ্গে। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। আর এই বন্ধুত্ব গড়ায় ভালোবাসায়। আমাদের প্রায় তিন বছরের সম্পর্ক। প্রেমের সম্পর্কটি তাদের পরিবার জানত এবং সেখানে তার পরিবারের সম্মতিতেই আমাদের বিয়ে হয়। এখন সে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। পরে বাংলাদেশে আসার পর মঙ্গলবার আমার গ্রামের বাড়ি করিমগঞ্জ পৌরসভার ঘোনাপাড়ায় দুই পরিবারের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। বিয়ের দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় এক লাখ টাকা।
স্থানীয় ছোটন মিয়া জানান, প্রেম যে কোনো বাধা মানে না, এটাই তার প্রমাণ। প্রেমানুভূতি প্রকাশের নির্দিষ্ট কোনো মাধ্যম নেই। সাত সাগর তেরো নদী পেরিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকার মিলনেই যেন সার্থকতা। এবার সেই তালিকায় নাম লেখালেন মালয়েশিয়ান তরুণী মিসনেওয়াতী বিনতে মিসকে।
প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসা মালয়েশিয়ান তরুণী মিসনেওয়াতী বিনতে মিসকে বলেন, দ্বীন মোহাম্মদ আমাকে ভালোবাসে, আমিও দ্বীনকে ভালোবাসি। বাংলাদেশে এসে আমি আমার পরিবার ও দ্বীনুর পরিবারের সম্মতিতে মঙ্গলবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেছি। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। এখানকার সবাই ভালো ও আন্তরিক।
দ্বীন মোহাম্মদের বড় ভাই খাইরুল ইসলাম বলেন, দুই পরিবারের সম্মতিতে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক তাদের বিয়ে পড়ানো হয়েছে। আমার ভাইয়ের স্ত্রী ভালো মনের মানুষ। আমাদের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে সহজেই মিশে গেছেন। ভিন্ন দেশের মানুষ আমাদের এ পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে দেখে ভালোই লাগছে।
করিমগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র হাজী আব্দুল কাইয়ূম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি বরপক্ষের পরিবারের কাছ থেকে। ব্যস্ততার জন্য সরাসরি দেখা হয়নি। আমি নবদম্পতির সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।