টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :
সমেজ উদ্দিন ও সাহেদা বেগমের ঘর আলোকিত করেছিলেন পিন্টু, ডলি, নাসরিন ও সাহাদত নামের চার সন্তান। এদের মধ্যে বড় ছেলে পিন্টুর জন্ম হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। জন্মের পর থেকেই অসুস্থ পিন্টু। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক সমস্যাও বাড়তে থাকে তার। দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে শরীরে বয়ে বেড়ানো রোগটি এখন অসহনীয় পর্যায় পৌঁছে গেছে।
কিছুদিন বারডেম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা করানো হয়। দরিদ্র বাবা-মা টাকার অভাবে এরপর আর কোনো চিকিৎসা করাতে পারেননি।
অন্যদিকে জন্মের তিন বছর পর নাসরিন আক্তারও একই রোগে আক্রান্ত হন। তারা ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন না। ভাত খাওয়ার সময় গলায় আটকে যাচ্ছে। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ভাত খেতে হচ্ছে। পিন্টুর গলার সমস্যার সঙ্গে এখন চোখেও মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাম চোখ বাইরের দিকে বেরিয়ে এসেছে। প্রতিনিয়ত পানি ঝরছে। অসুস্থ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাও এখন দিশেহারা। বৃদ্ধ বয়সে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে যা পান তা দিয়ে সন্তানদের খাবারের ব্যবস্থা করছেন সমেজ উদ্দিন।
প্রাথমিকভাবে তাদের দেখে চিকিৎসকরা বলছেন, থাইরয়েড বা গলগন্ড রোগ থেকে এ সমস্যা হয়েছে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় রোগটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
অসুস্থ এই দুই ভাই-বোনের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের পাকুল্যা পূর্বপাড়া গ্রামে।
সন্তানদের অসহায়ত্বে দিশেহারা বৃদ্ধ বাবা সমেজ উদ্দিন জানান, টাকার অভাবে অনেক আগেই দুই সন্তানের চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছেন। ছেলের গলার সমস্যার সঙ্গে এখন চোখেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। যন্ত্রণায় প্রতিদিন কাঁদে ছেলে পিন্টু।
তিনি জানান, ১৯৮৭ সালে তিনি পরিবার নিয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মামুদনগর ইউনিয়নের কুকুরিয়ার চরে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। তাদের সেই বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হলে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ২০১৬ সালে মির্জাপুরের নিজ গ্রাম পাকুল্যাতে চলে আসেন। ডলি নামের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ছোট ছেলে সাহাাদত বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন।
বয়স বাড়ায় এখন আর কাজ করতে পারেন না সমেজ উদ্দিন। স্বামী-স্ত্রী দুজনে প্রায় সময় অসুস্থ থাকেন। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পান তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে তাদের সংসার চলছে এখন।
মা সাহেদা বেগম জানান, জন্মের পর পিন্টুর গলা রক্তবর্ণ থাকতো। পরে হোমিও ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ খাওয়েছি। এরপর দিন দিন গলায় শক্ত দলাকৃতি হয়ে যায়। আস্তে আস্তে তা বড় হতে থাকে। নাসরিন সুস্থভাবে জন্ম নিলেও তিন বছর পর তার গলায় পিন্টুর মতো একই চিহ্ন দেখা দেয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নষ্ট হচ্ছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের ধনী ব্যক্তিদের কাছে ছেলে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাই।
মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে থাইরয়েড বা গলগণ্ড রোগ থেকে এ সমস্যা হয়েছে। সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নাক, কান, গলা, এন্ডোক্রাইনোলজিস, মেডিসিন ও সার্জারি সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা করাতে হবে। তাদের বেশকিছু পরীক্ষা করাতে হবে। এসব চিকিৎসা ব্যয়বহুল হলেও দেশেই সম্ভব।
তিনি বলেন, বঙ্গন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা করা যেতে পারে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার