ধর্ম ডেস্ক:
জিনিসের হেফাজতসহ বিভিন্ন কারণেই অন্যের কাছে আমানত রাখতে হয়। আবার আমাদের কাছেও অনেকে অনেক কিছু আমানত রাখেন। আমানতের হেফাজতের সর্বাত্মক চেষ্টার পরেও কখনো কখনো তা হারিয়ে যায়। আমানতের বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ তাই হারিয়ে গেলে অনেক টেনশনে ভুগতে হয়। মালিকের কাছে আমানতের বস্তুটির জরিমানা দিতে হবে কিনা?- এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান না জানা মানুষজনকে একটু বেশিই ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ বিষয়ে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, কারো কাছে থাকা আমানতের জিনিস যদি তার উদাসিনতার কারণে হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায় তাহলে ওই বস্তুর মালিকের কাছে জরিমানা দিতে হবে। আর যদি কারো কাছে থাকা আমানতের জিনিস রক্ষার বিষয়ে সে যথাসাধ্য চেষ্টা করে এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে কোনো ধরনের অলসতা না করে, কিন্তু এরপরেও তা হারিয়ে যায়, তাহলে জরিমানা দিতে হবে না। -(মাজাল্লা ১৫১; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৭৬; মাজমাউল আনহুর ৩/৪৭১)
মনে রাখতে হবে আমানতদারিতা এক মহৎ গুণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ তার প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও।’ -(সূরা আন নিসা, আয়াত, ৫৮)
আয়াতের সারমর্ম হচ্ছে, যার দায়িত্বে কোনও আমানত থাকবে, সে আমানত প্রাপককে পৌছে দেয়া তার একান্ত কর্তব্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমানত ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
আনাস রা. বলেন, এমন খুব কম হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনও ভাষণ দিয়েছেন অথচ তাতে একথা বলেননি – ‘যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার মধ্যে ঈমান নেই। আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিয়মানুবর্তিতা নেই, তার দ্বীন নেই’। -(মুসনাদে আহমাদ ৩/১৩৫)
আমানতদারী না থাকা মুনাফেকীর একটি আলামত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মুনাফেকীর লক্ষণসমূহ বর্ণনা প্রসঙ্গে একটি লক্ষণ এটাও বলেছিলেন যে, যখন তার কাছে কোনও আমানত রাখা হয় তখন সে তাতে খেয়ানত করে। -(বুখারী ৩৩; মুসলিম: ৫৯)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার উম্মত যদি আমার থেকে আমনত রক্ষা, সত্য কথা, উত্তম চরিত্র, হালাল রিজিক এই চারটি জিনিস নিতে পারে, তাহলে দুনিয়া ও আখিরাত তার হাতের মুঠোয় এসে পড়বে।’ (মুসনাদে আহমাদ, ৬৬৫২)