সম্পাদকীয়:
মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টার শেল বাংলাদেশের সীমান্তের মধ্যে এসে পড়ার বিষয়টি অনভিপ্রেত। জানা গেছে, রোববার বেলা ৩টার দিকে জিরো পয়েন্টসংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় মর্টার শেল দুটি আছড়ে পড়ে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা দুর্ঘটনাবশত নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা এখনো পরিষ্কার নয়। স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, কয়েক দিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি হচ্ছে। মর্টার শেলসহ গুলির শব্দ কানে বাজলেও প্রকৃতপক্ষে সেখানে কী ঘটছে, তা বলা কঠিন। তবে এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। রোববার সকাল থেকে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। দুপুরে সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানকে চক্কর দিতে দেখা যায়। এর মধ্যেই বাংলাদেশের সীমান্তে মর্টার শেল পড়ার ঘটনা ঘটল। উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের ভেতর প্রবেশ করে ফিরে যায়। পরদিনও ঘটে একই ঘটনা। এসব ঘটনার প্রকৃত কারণ দ্রুত উদ্ঘাটন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের অন্যতম নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার। দুর্ভাগ্যজনক, দেশটির আচরণ সৎ প্রতিবেশীসুলভ নয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালিয়ে সেদেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালায়, তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ নৃশংসতার মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার থেকে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি করে আসছে মিয়ানমার। এর মাশুল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতর মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনাটি উত্তেজনাকর। দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে মিয়ানমার অবিলম্বে সীমান্ত এলাকা থেকে সব ধরনের অনভিপ্রেত আচরণ প্রদর্শন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে-এটাই কাম্য।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার