স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট জেলা পরিষদের অধীনে থাকা ৮নং বিয়ানীবাজার ওয়ার্ডে সুষ্টুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ৩-৪দিন পূর্ব থেকে ভোটাররা টাকার কাছে প্রভাবিত হচ্ছেন-এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। জেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হওয়ার ২দিন পেরিয়ে গেলেও টাকা লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে। কোন ভোটার, কোন প্রার্থীর কাছ থেকে কতটাকা নিয়েছেন, তা-ও অনেকটা ওপেন সিক্রেট ।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণত: জনপ্রতিনিধিরা ভোট প্রদান করতে পারেন। বিয়ানীবাজারেও ১৪৬জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার কথা ছিল। অল্প সংখ্যক এই ভোটারের মনজয় করতে নানা তৎপরতা চালান প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা। কৌশল-আঞ্চলিকতা, দলীয় পরিচয়, আত্মীয়তার বন্ধন ইত্যাদি নানা অজুহাতে ভোট লাভের চেষ্টা চালানো হয়। তবে এসব ছাড়িয়ে আলোচনায় স্থান পায় প্রার্থীদের টাকা ছড়ানো এবং ভোটারদের টাকা নেয়ার লোভ-লালসা। অনেক ভোটার প্রার্থীর বাড়ি থেকে এসে টাকা নিয়ে গেছেন, এমন খবরও আছে মানুষের মুখে-মুখে। ভোটের মাঠে টাকা লেনদেনের এসব বিষয় নিয়ে নেটিজেনদের আক্রমণে অনেকটা মুখ লুকিয়ে চলছেন বিভিন্ন ইউনিয়নের সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্যরা।
জনশ্রুতি আছে, গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬-৮টি ভোট ১লাখ ২০হাজার টাকা দামেও বিক্রি হয়েছে। আরো প্রায় ২২টি ভোট বিক্রি হয়েছে লাখ টাকা দরে। বেশীরভাগ ভোট কেনাবেচা হয় ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে। ভোট বিক্রিতে সবচেয়ে বেশী জড়িয়ে পড়েন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্যরা। ভোটের আগের দিন এক প্রার্থীর সাথে আলাপকালে (অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে) নারী সদস্য জানান, ভাই আপনে ২০ হাজার টাকা দিছইন। ইগুন নেক্কা গিয়া আইয়া। কারণ জানতে চাইলে ওই নারী ভোটার প্রার্থীকে বলেন, অউ টেকা দিয়া আপনে মাইনষরে কইদিলা। আমারে এর চেয়ে বেশী দেওরা আছইন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিয়ানীবাজার ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন চারখাই ইউনিয়নের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমদ আলী। তিনি মাত্র ৩ ভোট লাভ করেন। অথচ তাঁর নিজ এলাকা চারখাই এবং আলীনগরে মোট ভোটার ছিলেন ২৬জন। এই ভোটগুলো গেল কোথায়-এমন প্রশ্নে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় বইছে। চারখাই এলাকার বাসিন্দারা এজন্য বর্তমান চেয়ারম্যান হোসেন মুরাদকে দোষারোপ করছেন। জেলা পরিষদের গত নির্বাচনে চারখাই এলাকা থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শামীম আহমদ। তিনি আঞ্চলিকতার টানে বিজয়ী প্রার্থীর সাথে সমান সংখ্যক ভোট লাভ করেন। পরে অবশ্য লটারীতে পরাজিত হন তিনি। সেইসময়ে মাহমুদ আলী ছিলেন চারখাই ইউপি চেয়ারম্যান। এবার সেই রেশে ভাটা দিলেন চারখাইয়ের ভোটাররা।
এমনিভাবে লাউতা-মুল্লাপুরের ২৬টি ভোটও পাননি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কাদির। তিনি ২৩টি ভোট পান। পড়ন্ত বয়সেও তাকে সম্মান জানাতে কৃপণতা করেছেন ওই দুই ইউনিয়নের ভোটররা। তবে শেষ হওয়া নির্বাচনে চমক দেখিয়েছেন বিজয়ী সদস্য খসরুল হক। তিনি নিজ ইউনিয়ন মুড়িয়ার ভোট সংরক্ষিত রাখার পাশাপাশি পৌরসভা, কুড়ার বাজার, চারখাই, আলীনগর, তিলপাড়া এলাকা থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট লাভ করেন।
বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী ৯জন প্রার্থীর অন্তত: ৭জন ১৫লাখ টাকার বেশী খরচ করেছেন। এই ৭ জনের মধ্যে আবার ৪ জনের খরচ ৩০ লাখ টাকার কমবেশী। বিপুল অংকের টাকা খরচ করেও যে সকল প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন তাদের কেউ কেউ টাকা ফেরত নিয়ে আসছেন।
একই সূত্র জানায়, একেকজন ভোটার অন্তত: ৪-৫জন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তাদের এই লোভনীয় কর্মকান্ডে নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। এখানকার অন্তত: ১শ’ জন ভোটার টাকার কাছে প্রভাবিত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।
জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা সুজন’র সভাপতি এডভোকেট মো. আমান উদ্দিন বলেন, নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ না হলে যোগ্য নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবেনা। আর টাকার এই খেলা বন্ধের দায় সকলের উপর বর্তায়। শুধুমাত্র প্রশাসন এই দায় নিলে চলবেনা। সাধারণ জনগণ, প্রার্থী এবং ভোটারদের দায় সবচেয়ে বেশী।