জেলা প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী নেপাল দাস (৩১) বিজিবির বিশেষ ক্যাম্পে কর্মরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তার শরীরে দুটি গুলি লাগে। একটি পিঠ দিয়ে ঢুকে বুক দিয়ে বের হয়ে যায়, আরেকটি তার ডান হাতের আঙুলে লেগেছিল।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছেন জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও ময়নাতদন্তে নিয়োজিত চিকিৎসক জয়নাল আবেদীন।
তিনি বলেন, নিহত বিজিবি সদস্যের শরীরে দুটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। একটি পিঠ দিয়ে ঢোকে, সেখানে ছোট ক্ষত ছিল। আর বুক দিয়ে বের হয়ে যায়, সেখানে বড় ক্ষত ছিল। আর একটি গুলি ডান হাতের একটি আঙুলে লাগে।
এদিকে বিজিবি সদস্য নেপাল দাসের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় হযরত জাকারিয়া নামে জয়পুরহাট বিজিবি-২০ এর বিশেষ ক্যাম্পের এক সিপাহী পলাতক রয়েছেন।
এক বিজিপি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিহতের ভাই গোপাল দাস বলেন, ভাইয়ের লাশ নিতে শুক্রবার দুপুরে আমি বিজিবির জয়পুরহাট ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। তখন সিও স্যারকে ভাইয়ের মৃত্যুর কারণ জানতে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে প্রথমে সান্ত্বনা দিয়েছেন। এরপর বলেছেন, তোমার ভাই ডিউটিতে ছিল। তার ডিউটি গেটে ছিল। রাত ১০টার দিকে দুটি গুলির শব্দ হয়। তখন ওই ক্যাম্পে যারা ছিল, তারা গুলির শব্দ পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখে নেপাল গুলিবিদ্ধ। পরে বিজিবির সদস্যরা নেপালকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, আমি সিও স্যারকে বলেছিলাম, স্যার আমার ভাইকে কে গুলি করল? তখন তিনি আমাকে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। শুধু আমাদের একজন সৈনিক পলাতক আছে। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নেপাল দাস নিহতের ঘটনায় ২০-বিজিবির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিজিবি-২০ জয়পুরহাট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশেষ ক্যাম্পে রাত ১০টার দিয়ে ফায়ারিংয়ের শব্দ হয়েছে। ওখানে অন্যরা ছিল না। ফায়ারিংয়ের শব্দে অন্য সদস্যরা এসে দেখে নেপাল গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। এটি একটি দুর্ঘটনা ও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
এদিকে পলাতক সিপাহী হযরত জাকারিয়ার বিষয়ে জানতে শনিবার আবারও অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এর আগে, গুলিতে নিহত বিজিবির সিপাহী নেপাল দাসের মরদেহ শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে তার নিজ গ্রামেতে বাড়িতে পৌঁছে। রাত দেড়টায় তার দাহ কার্য শেষ করা হয়। সেসময় বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। নিহত নেপালের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। তার নিজ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নেপাল দাসকে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে বিজিবির পোশাক পরা ও বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ওই হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার দুপুরে বিজিবি-২০ জয়পুরহাট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল ইসলাম মরদেহটি নেপালের বড় ভাই গোপাল দাসের কাছে হস্তান্তর করেন।
নেপাল দাসের বাড়ি ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মেঘচামী ইউনিয়নের কলাগাছি দাসপাড়া গ্রামে। নেপাল ওই গ্রামের নারায়ণ দাসের ও কানন বালা দাস দম্পতির ছেলে। এক বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে নেপাল ছিলেন মেজ। বোন হাসি রাণী দাস বিবাহিত। বড় ভাই গোপাল দাস ব্র্যাক ব্যাংকে ও ছোট ভাই বাদল দাস সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তার স্ত্রী অঞ্জনা দাস ও চার বছরের অর্ণব দাস নামের ছেলে রয়েছে।