সিলেটSunday , 4 September 2022
  1. আইন-আদালত
  2. আন্তর্জাতিক
  3. উপ সম্পাদকীয়
  4. খেলা
  5. ছবি কথা বলে
  6. জাতীয়
  7. ধর্ম
  8. প্রবাস
  9. বিচিত্র সংবাদ
  10. বিনোদন
  11. বিয়ানী বাজার সংবাদ
  12. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
  13. ব্রেকিং নিউজ
  14. মতামত
  15. রাজনীতি

ব্যথায় কাতরাচ্ছেন ৪০ বছর ধরে ‌‘লাশ টানা হাশেম’

Link Copied!

নাটোর প্রতিনিধি:
হাশেম প্রামানিকের বয়স ষাটের কাছাকাছি। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে দুই থানা এলাকা থেকে নিজ ভ্যানে মরদেহ নিয়ে মর্গে পৌঁছে দিয়েছেন। দীর্ঘ দিন মরদেহ টানার কারণে তার নাম হয়ে যায় ‘লাশ টানা হাশেম’।

হাশেম প্রামানিক নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার কচুয়া কারিগরপাড়া গ্রামের আবু বক্কর প্রামানিকের ছেলে। সড়ক দুর্ঘটনার পর থেমে গেছে তার জীবন। এখন তিনি শয্যাশায়ী।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় ভাঙা পা নিয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন হাশেম। যেন দেখার কেউ নেই।

জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি প্রতিবেশী এক ভাতিজার মেয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন হাশেম। ওই ভাতিজার নিজেরও ভ্যান গাড়ি রয়েছে। তাই তিনি হাশেমের ভ্যান চালাচ্ছিলেন। আর হাসেম ভ্যানের ডান পাশে বসেছিলেন। মালঞ্চি বাজার পার হওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে ইঞ্জিনচালিত একটি ভ্যান সজোরে তার পায়ে ধাক্কা দেয়। ওই গাড়ির সামনের দুটি রড নাটসহ তার পায়ের মাংসের ভেতর চলে যায়। হঠাৎ ধাক্কায় ভ্যানটি উল্টে গেলে তার পায়ের হাড় ভেঙে যায়।

স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে প্রথমে তাকে রাজশাহী এবং পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পর পর দুইবার অস্ত্রোপচার করতে তার ১৮ কাঠা জমি ও বাড়িতে পালন করা দুটি গরুর বাছুর বিক্রি করতে হয়েছে। এখন তার ৩ কাঠা জমি রয়েছে। ২০ দিন পর তার আরও একটি অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে। অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, সংসারের খরচের পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের টাকা জোগাড় কীভাবে হবে ভেবেই দিশেহারা হাসেম।

অশ্রুশিক্ত চোখে হাশেম বলেন, পঁচা-গলা, পোকামাকড় থাকে অনেক লাশের গায়ে, কবর থেকেও মাঝে-মধ্যে লাশ তুলতে হয়, দুর্গন্ধের কারণে লাশের আত্মীয়-স্বজনও কাছে যায় না। তখন আমরা লাশটা কোলে তুলে নিয়ে আসি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আবার দাফন-কাফন করি। এতকিছুর পরও আমি অবহেলিত।

তিনি বলেন, ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করি। বিয়ের আগে স্থানীয় বিভিন্ন চায়ের দোকানে খড়ি সরবরাহ করতাম। বিয়ের পর দাদার কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটি ভ্যান কিনি। বিয়ের ১৪ দিন পর থেকেই বড়াইগ্রাম আর বাগাতিপাড়া থানা পুলিশের ডাকে মরদেহ বহনের কাজ শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, আমার সংসারে দুই ছেলে আর তিন মেয়ে রয়েছে। সবারই বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে শুকুর আর গাফ্ফারও ভ্যান চালায়। তাদের সংসার আলাদা। স্ত্রীর এক চোখ অপারেশনের পর অনেক দিন থেকেই সে অসুস্থ। এখন মাত্র এক চোখে দেখে সে।

হাশেম বলেন, দুর্ঘটনার পর মাঝে মাঝে দুই ছেলে কিছু সহযোগিতা করেছে। এছাড়া দুই থানা থেকেও সামান্য কিছু টাকা পাঠিয়েছিল।

তিনি বলেন, ৪০ বছর লাশ টেনেই জীবন চালিয়েছি। আর এখন নিজেই জীবন্ত লাশ হয়ে জীবনযাপন করছি। অপারেশন ছাড়াও প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকার ওষুধ লাগে। কোনোভাবেই জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ অবস্থায় চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশ, প্রশাসনসহ সমাজের হৃদয়বান ও বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন হাসেম। হাশেমকে সাহায্য করতে ০১৭১০-৬১১৩০৪, ছেলে শুকুরের ০১৭৪৬-৮৬১৩৬৪ (বিকাশ পার্সোনাল) নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, হাশেম অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে তাকে তাৎক্ষণিক কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন তার ছেলে শুকুর মরদেহ টানা কাজ করছে। হাশেমের ব্যাপারে তার ছেলের কাছে খবর নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, হাশেমকে আরও সহযোগিতা করার ব্যাপারে কাজ চলছে।